ম্যাচ সন্ধ্যা ৭টায়। অথচ সকাল ১১টা থেকে ঢাকা স্টেডিয়ামের আশপাশে একজন, দুজন করে হাজার হাজার দর্শক উপস্থিত হয়েছেন। বিকাল ৪টার আগে গোটা স্টেডিয়াম দর্শকে ভরে যায়। আশ্চর্য হলেও সত্যি, ২২ হাজার দর্শকের অধিকাংশই পরে আসেন সাদা রঙের বাংলাদেশের জার্সি। এমন দৃশ্য দেশের ফুটবল ইতিহাসে বিরল। বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ নিয়ে যে উন্মাদনা, যে জনজোয়ারের সৃষ্টি হয়েছে এর মূল কারিগর একজন হামজা চৌধুরী। পিছিয়ে ছিলেন না সামিত সোমও। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইংলিশ ফুটবলার হামজা একাই বদলে দিয়েছেন বাংলাদেশের ফুটবলের আবহ। তাঁর সঙ্গী হয়েছেন কানাডা জাতীয় দলের পক্ষে দুটি ম্যাচ খেলা সামিতও। তিনিও ফুটবলপ্রেমীদের মননে জায়গা করে নেন। কানাডার আরেক প্রবাসী ফুটবলার কাজেম শাহ, ফিনল্যান্ডের তারিক কাজি, ইতালির ফাহামিদুল ইসলামরাও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। এসব প্রবাসী ফুটবলার নিয়ে গড়া বাংলাদেশ জাতীয় দলের খেলার পারদ আগ্রহের শীর্ষে জায়গা করে নেয়। কিন্তু সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দুই তারকা ফুটবলারেও পাল্টায়নি দলের চিত্র। চরমভাবে ফুটে উঠেছে রক্ষণভাগের দুর্বলতা।
সারা বাংলাদেশ থেকে ফুটলপ্রেমীরা ঢাকা স্টেডিয়ামে হাজির হয়েছেন প্রিয় দলের খেলা দেখতে। কেউ কেউ আসেন ‘হামজা তোমাকে ভালোবাসি’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে। কেউ আসেন সামিতের নামে প্ল্যাকার্ড নিয়ে। ফাহামিদুলকে নিয়েও উচ্ছ্বাস কম ছিল না। সন্ধ্যার ম্যাচ দেখাতে দুপুর ১২টায় গ্যালারি গেট খুলে দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। পশ্চিম গ্যালারিতে ঢুকতে জিপিও থেকে শুরু হয় লম্বা লাইন। পূর্ব গ্যালারির লাইন শুরু হয়েছে দৈনিক বাংলার মোড় থেকে। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন তরুণ-তরুণীরা। ম্যাচের একটি টিকিটের জন্য হাহাকার দেখা গেছে সমর্থকদের মাঝে। কেউ কেউ চড়া দামে টিকিট ব্ল্যাক করেছেন। আবার একটি টিকিট কয়েকবার ফটোকপি করাতে অনেকেই মূল টিকিট নিয়ে ঢুকতে পারেননি।
বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে জাতীয় দল নিয়ে এত আগ্রহ দেখা যায়নি। এত উন্মাদনা তৈরি হয়নি। জাতীয় দলের ফুটবল ম্যাচ দেখতে একটি টিকিটের জন্য এমন হাহাকার তৈরি হয়নি। প্রতিপক্ষ সিঙ্গাপুর হলেও বাংলাদেশের আগ্রহ তৈরি হয়েছিল মূল তিন ফুটবলার হামজা, সামিত ও ফাহামিদুলকে নিয়ে। তবে হামজা ও সামিত নিজেদের প্রমাণ করেছেন কতটা উঁচুমানের ফুটবলার তাঁরা। হামজা এর মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষে তিনটি ম্যাচ খেলেছেন। সামিতের অভিষেক হয়েছে গতকাল। জাতীয় দল নিয়ে দর্শকের এমন আগ্রহ এবারই প্রথম। তবে ক্লাব ফুটবলে আশি ও নব্বইয়ের দশকে এমনটা ছিল স্বাভাবিক চিত্র। আবাহনী, মোহামেডান ম্যাচ নিয়ে দেশজুড়ে উন্মাদনা তৈরি হতো।