জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের মূল ফটকের অনেকটা দূরে আটকে দিলেন নিরাপত্তারক্ষী। স্মিত হাসি দিয়ে বললেন, মিডিয়ার প্রবেশ নিষেধ? কেন? এ প্রশ্নের উত্তর জানা নেই। জানে ওপরের কর্তা-ব্যক্তিরা। শিলংয়ের এ মাঠেই কাল এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-ভারত। এ ম্যাচ ঘিরে উত্তাপের শেষ নেই। হামজা চৌধুরী আর জামাল ভূঁইয়ারা জয়ের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। অন্যদিকে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস ভেঙে দিতে সুনীল ছেত্রীদের দলে ফিরিয়ে চোখ রাঙাচ্ছে ভারতীয় দল। এতটুকুতেই তো আর থেমে নেই! এখানে চলছে লুকোচুরির খেলা। সঙ্গে মেঘ-বৃষ্টি-রোদের খেলা তো আছেই!
ভারতীয় সাংবাদিকদের একটা দল নিয়মিত অনুসরণ করে চলেছে বাংলাদেশের অনুশীলন। গতকালও হামজা-জামালদের অনুশীলনের প্রথম ভাগে কড়া নজর রেখেছেন তারা। তবে ভারতীয়দের অনুশীলন কখন হয়, তাও জানার উপায় নেই। এমনকি বাংলাদেশের টিম অফিশিয়ালরাও বিষয়টা সম্পর্কে অন্ধকারে। গতকাল একবার জানা গেল, ভারতীয় দল অনুশীলন করবে বিকালে। পরে দেশটির সাংবাদিকরা বললেন, সুনীল ছেত্রীরা অনুশীলনই করেননি। কিন্তু জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের কাছ থেকেই জানা গেল, সুনীল ছেত্রীরা অনুশীলন সেরে নিয়েছেন ম্যাচ ভেন্যুতেই। এতক্ষণে গোমর ফাঁস হলো! এ কারণেই কড়াকড়ি ছিল স্টেডিয়ামের আশপাশে! শিলংয়ে ভারতীয় দল এমন লুকোচুরির খেলাই খেলছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটাকে তারা সত্যিকার অর্থেই গুরুত্ব দিচ্ছে। হামজা চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তি দলটাকে বেশ চিন্তায় ফেলেছে। পাশাপাশি সতর্কও করে তুলেছে।
কেবল ভারতীয়দের এ লুকোচুরির খেলাই নয়, শিলংয়ে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ অনেক। এখানকার আবহাওয়ার সঙ্গেই প্রথম লড়াইটা লড়তে হচ্ছে হামজাদের। গতকাল সকালে সূর্য উঠল পূর্ণ উত্তাপ নিয়ে। দুপুর গড়ানোর আগেই বদলে গেল চিত্র। অন্ধকার নেমে এলো মধ্য দুপুরে। মুষলধারে বৃষ্টি। থেমে থেমে চলল শিলাবৃষ্টিও। কনকনে ঠান্ডা বাতাস হাড় কাঁপিয়ে দেয়। এই বৃষ্টি আর এই রৌদ্রের খেলায়ও জিততে হবে বাংলাদেশের স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যদের।
প্রতিপক্ষ আরও আছে। স্থানীয় দর্শক। এখানকার দর্শকরা এরই মধ্যে জেনে গেছেন বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের খবর। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা চৌধুরীর ইউটিউব ক্লিপগুলোও উল্টে-পাল্টে দেখছেন তারা। উত্তর-পূর্ব পার্বত্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ছাত্র সাইমন। তার সঙ্গেই দেখা হলো জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের ঠিক বাইরে। তিনি বললেন, হামজা চৌধুরীর কথা জানি আমি। তার অসাধারণ নৈপুণ্য দেখেছি ইউটিউবের ক্লিপগুলোতে। ভারতের জন্য তিনি ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন। তবে সাইমনরা ভারতের জয়ের জন্য সেদিন স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে সরব থাকবেন। বাংলাদেশকে এই ফুটবল-পাগল ভারতীয় সমর্থকদের চাপটাও সামলাতে হবে।
লাল-সবুজের দল এসব নিয়ে বেশ সতর্ক আছে। পাশাপাশি অনেকটা চাপেও আছে কী! গতকাল শিলংয়ের পোলো গ্রাউন্ডের অ্যাস্ট্রো টার্ফে অনুশীলনের আগে তপু বর্মণ বললেন, ‘কি একটা হাইপ উঠেছে দেখেছেন? বাংলাদেশের ফুটবল দর্শকরা অনেক ইতিবাচক। তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।’ তপুর কথাতেই কি চাপের বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি! দলের কোচিং স্টাফ আর অন্যরাও যে চাপ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন, তাও স্পষ্ট। হাভিয়ের কাবরেরা নিজেই জয়ের কথা বলেছেন। হামজা-জামালদের কণ্ঠেও জয়ের সুরই শোনা গেছে। কিন্তু পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসতেই কি আসল সত্যিটা বুঝতে শুরু করেছেন তারা?
সুনীল ছেত্রী ভারতীয় দলে ফেরায় বেশ সতর্ক বাংলাদেশ দল। তপু বর্মণ নিজের কাজটা ঠিকঠাক করতে চান। কারণ, সুনীল ছেত্রীই যে ভারতের প্রধান অস্ত্র এখনো! তিনি দলে ফেরার পরই ভারত দারুণ একটা জয় পেয়েছে। তিনি গোলও করেছেন। অবসরের আট মাস পর জাতীয় দলে ফিরেই গোল করে নিজের সামর্থ্যটা তুলে ধরেছেন ছেত্রী। এতকিছুর পরও এই ‘বাংলাদেশ’ ভিন্ন বাংলাদেশ। নতুন পথে ছুটে চলার দৃপ্ত শপথ নিয়ে ছুটছেন লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। সেই নতুন পথ যে বিজয়ের পথ তাতে আর সন্দেহ কী! ভারতীয়দের লুকোচুরির খেলা, প্রতিকূল পরিবেশ সবকিছুর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বিজয়ের সেই রাজপথে ছুটবেন হামজা-জামালরা!