চাঁদে মানুষের বসতি এখনো কল্পনার মতো শোনালেও সেই স্বপ্নের পথে বড় এক ধাপ ফেলতে যাচ্ছে বিশ্ব। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে জমাটবদ্ধ পানির সন্ধান পেতে দুই দেশ হাতে হাত মিলিয়ে চালু করছে লুনার পোলার এক্সপ্লোরেশন মিশন। এটি চন্দ্রযান–৫ নামেও পরিচিত।
মিশনটি সফল হলে প্রথমবারের মতো চাঁদের মেরু অঞ্চলে বরফে জমে থাকা পানির উপস্থিতি নিশ্চিতভাবে বোঝা যাবে। আর সেই পানি শুধু পান করার জন্যই নয়—হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনে ভাগ করে ভবিষ্যৎ মহাকাশযানের জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। ফলে চাঁদ একসময় মঙ্গল ও দূরের গ্রহে যাওয়ার ‘স্টেজিং পয়েন্ট’ হয়ে উঠতে পারে।
এই মিশনে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো দেবে ল্যান্ডার। আর জাপানের মহাকাশ সংস্থা জ্যাক্সা দেবে তাদের শক্তিশালী এইচ-থ্রি (H3) রকেট ও উন্নত রোভার। ২০২৮ সালে উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা রয়েছে।
জাপানি বিজ্ঞানী ড. সাকু সুনেতা বলেন, চাঁদে টিকে থাকতে হলে প্রথম শর্তই হলো পানি। পৃথিবী থেকে পানি পাঠানো অত্যন্ত ব্যয়বহুল, তাই চাঁদের বরফ মানুষের ভবিষ্যৎ স্থায়ী বসতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।
কিন্তু মিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—চাঁদের দক্ষিণ মেরুর দুর্গম ভূখণ্ড। সেখানে সূর্যের আলো তির্যক পড়ে, চারদিকে অন্ধকার ছায়া থাকে, আর এসব জায়গায় বরফ জমে থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ভারতের সফল চন্দ্রযান–৩–এর কারণে জাপান এই কঠিন জায়গায় অবতরণে ভারতকে পুরোপুরি ভরসা করছে।
প্রায় ৩৫০ কেজি ওজনের রোভারটি হবে এখন পর্যন্ত চাঁদে পাঠানো সবচেয়ে ভারী রোভার। এটি ১০০ দিন কাজ করতে পারবে। তবে চাঁদের দীর্ঘ রাত, সেখানে দুই সপ্তাহ সূর্যের আলো থাকে না এবং তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাস ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে—এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য রোভারে বিশেষ নিরোধক ব্যবহৃত হয়েছে, যা রোভারকে ‘জ্যাকেট পরানোর’ মতো কাজ করবে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, চাঁদের পানি নিয়ে এখন বিশ্বজুড়ে প্রতিযোগিতা চলছে। আগে যে খুঁজে পাবে, সেই রাষ্ট্র বড় সুবিধা পাবে। তাই ভারত ও জাপান এই মিশনকে কৌশলগতভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। LUPEX সফল হলে চাঁদে স্থায়ী ঘাঁটি তৈরির পথ খুলে যাবে—এমনটাই আশা করছেন দুই দেশের বিজ্ঞানীরা।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল