প্রথম মহিলা নোবেল পুরস্কার জয়ী বিজ্ঞানী মারি ক্যুরি’র জন্মদিন আজ। এই পোলীয় ও ফরাসি বিজ্ঞানী ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে তেজস্ক্রিয়তার ওপর গবেষণার জন্য তার স্বামী পিয়ের ক্যুরি এবং তেজস্ক্রিয়তার আবিষ্কারক অঁরি বেকেরেলের সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান।
তিনি ছিলেন প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী যিনি বিজ্ঞানের দুইটি ভিন্ন শাখায় দুইবার নোবেল পুরস্কার জেতেন। তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়েরও প্রথম মহিলা অধ্যাপক ছিলেন।
মারি ক্যুরি ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে পোল্যান্ডের ওয়ারশতে জন্মগ্রহণ করেন। যেটি তখন রাশিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ ছিলো। দারিদ্র আর অনিশ্চয়তা ছিল তার নিত্যদিনের সঙ্গী। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে সে ছিল সবার ছোট। মারি কুরি ওয়ারশর গোপন ভাসমান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন এবং ওয়ার্সাতেই তার ব্যবহারিক বৈজ্ঞানিক প্রশিক্ষণ শুরু করেছিলেন।
১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে ২৪ বছর বয়সে সে তার বড় বোন ব্রোনিস্লাভাকে অনুসরণ করে প্যারিসে পড়তে যান। সেখানেই সে তার পরবর্তী বৈজ্ঞানিক কাজ পরিচালনা করেন। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে মারি কুরি তার স্বামী পিয়েরে কুরি এবং পদার্থবিদ হেনরি বেকেরেলের সঙ্গে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার জেতেন। পরে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে তিনি এককভাবে রসায়নেও নোবেল পুরস্কার জেতেন।
পদার্থবিজ্ঞানে তিনি নোবেল পান তেজষ্ক্রিয়তা নিয়ে কাজ করার জন্য। আর রসায়নে নোবেল পান পিচব্লেন্ড থেকে রেডিয়াম পৃথক করার জন্য।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হাসপাতালগুলোতে এক্স-রে সরঞ্জামের ঘাটতি ছিলো। যুদ্ধাহত রোগীদের এক্স-রে সঠিকভাবে করানোর অর্থ যোগাতে তিনি তহবিল সংগ্রহে নামেন। এসময় অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি ২২০ টি রেডিওলোজি স্টেশন গড়ে তোলেন। এর মধ্যে ২০০ টি বিভিন্ন জায়গায় স্থায়ী এবং ২০টি ছিল ভ্রাম্যমাণ।
এগুলো তিনি বিভিন্ন বিত্তবান মহিলাদের কাছ থেকে গাড়ি ধার নিয়ে তৈরি করেছিলেন। তিনি নিজেও বিভিন্ন স্টেশনে এক্সেরে করতে সাহায্য করতেন এবং যুদ্ধের সময় তার গড়া এই রঞ্জনবিদ্যা ইনস্টিটিউটগুলোয় প্রায় ১০ লাখ যুদ্ধাহতের এক্সরে করা হয়েছিলো।
ফ্রান্সের একজন নাগরিক হিসেবে থাকা অবস্থায়ও মারি স্ক্লদভস্কা ক্যুরি (তিনি তার দুটো উপাধিই লিখতেন) কখনোই তার পোলিশ পরিচয় ভুলে যাননি। তিনি তার মেয়েদের পোলিশ ভাষা শিখিয়েছিলেন এবং তাদের পোল্যান্ডে নিয়েও গিয়েছিলেন।
পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারসতে নিজের গড়া রেডিয়াম ইনস্টিটিউটসহ তিনি অন্য একটি রেডিয়াম ইনস্টিটিউটে কাজ করতেন। রেডিয়াম বিষয় নিয়ে রেডিয়াম ইনস্টিটিউটে গবেষণা করে তিনি তার মেয়ে ইরিন, মেয়ের স্বামী ফ্রেডরিক জুলিয়েটের সাথে যৌথভাবে নোবেল পান।
তিনি নিজে প্রথম যে মৌলটি আবিষ্কার করেন, তার জন্মভূমির নাম অনুসারে ওই মৌলের নাম দেন পোলনিয়াম।
গবেষণার সময় নিজের জামার পকেটে রেডিয়াম পূর্ণ টেস্টটিউব রাখা এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় নিজের তৈরি ভ্রাম্যমাণ এক্স রশ্মি ইউনিটে কাজ করার মাধ্যমে তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে আসায় অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানেমিয়া হওয়ায় মারি ক্যুরি ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জুলাই ফ্রান্সের একটি স্বাস্থ্যনিবাসে মৃত্যুবরণ করেন।
বিডি প্রতিদিন/কামাল