বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সূর্যের কাছাকাছি আসার পর হঠাৎ করেই আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূমকেতু থ্রি-আই/অ্যাটলাস এর উজ্জ্বলতা বেড়ে গেছে এবং এর রং নীলচে হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা নিশ্চিত করেছে, পৃথিবীর জন্য এই ধূমকেতুটি কোনো হুমকি নয়, এটি নিরাপদ দূরত্বেই থাকবে।
গত ২৯ অক্টোবর মহাকাশযানের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ধূমকেতুটি সূর্যের সবচেয়ে কাছের অবস্থানে পৌঁছানোর সময় এর উজ্জ্বলতা হঠাৎ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এই অস্বাভাবিক আচরণ বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি কেড়েছে।
চলতি বছরের জুলাই মাসে এই ধূমকেতুটি প্রথম আবিষ্কৃত হয়। এখন পর্যন্ত এর আচরণের ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীরা পুরোপুরি দিতে পারেননি। গবেষকেরা জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর ২০২৫ সালের মধ্যে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী ধূমকেতুটির আলো এক লাফে বেড়ে যায়।
এসটিইআরইও-এ, এসওএইচও ও গোয়েস-১৯ উপগ্রহের যন্ত্রের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য বলছে, ধূমকেতুর উজ্জ্বলতা বেড়ে যাওয়ার পেছনে সূর্যের তাপে গ্যাস নিঃসরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ধূমকেতুটি সূর্যের চেয়ে নীলচে রঙের দেখাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মতে, সূর্যের আলো সাধারণত ধূলিকণায় লালচে হয়ে যায়, তাই এর নীলচে হওয়া একেবারেই অস্বাভাবিক ঘটনা।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যাভি লোব বলেছেন, এটি এখন পর্যন্ত এই ধূমকেতুর নবম অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। সাধারণত ধূমকেতুর পৃষ্ঠ অনেক ঠান্ডা হওয়ায় তা সূর্যের তুলনায় লালচে দেখায়। কিন্তু থ্রি -আই/অ্যাটলাসের ক্ষেত্রে তা উল্টো—এটি সূর্যের চেয়েও নীল দেখাচ্ছে।
লোব আরও জানান, এর আগের আটটি অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে তিনি এই ধূমকেতুকে তার ‘লোব স্কেলে ’ ১০-এর মধ্যে ৪ নম্বর দিয়েছেন, যা ইঙ্গিত করে এটি কোনো প্রযুক্তিনির্ভর উৎস থেকেও আসতে পারে। ধূমকেতুর কক্ষপথ সূর্যের চারপাশে এমনভাবে ঘুরছে যা সাধারণ ধূমকেতুর তুলনায় অনেক ভিন্ন।
আরও জানা গেছে, এর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস অন্যান্য ধূমকেতুর তুলনায় অনেক বড়, এবং এটি মঙ্গল, শুক্র ও বৃহস্পতির কাছ দিয়ে অতিক্রম করেছে। তবে পৃথিবী থেকে তা দেখা যায়নি। সবশেষে নাসা নিশ্চিত করেছে—ধূমকেতু থ্রি-আই/অ্যাটলাস পৃথিবীর কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে না এবং এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ দূরত্বেই থাকবে। বিজ্ঞানীরা এখন এর অস্বাভাবিক আচরণের পেছনের রহস্য উন্মোচনে কাজ করছেন।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল