১৯৫০-এর দশকে ক্যালিফোর্নিয়ার প্যালোমার মানমন্দিরে আকাশ পর্যবেক্ষণের সময় তোলা কিছু ছবিতে অজানা উৎসের আলোর ঝলক দেখা গিয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে এই আলো ঘিরে রহস্য থেকে গেলেও সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলছেন, এগুলোর সঙ্গে ইউএফও বা অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু দেখার ঘটনার যোগসূত্র থাকতে পারে।
এই ছবি তোলা হয়েছিল ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৮ সালের মধ্যে পরিচালিত প্যালোমার স্কাই সার্ভে প্রকল্পের সময়। এটি ছিল এক বিশাল উদ্যোগ, যেখানে উত্তর আকাশের মানচিত্র তৈরি করা হয়। গবেষকেরা ১ লাখেরও বেশি পুরনো ছবির বিশ্লেষণে দেখেছেন, এই রহস্যময় ঝলকের বেশিরভাগই ঘটেছিল পৃথিবীর পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার পরদিন।
সায়েন্টিফিক রিপোর্টস এবং অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি অব দ্য প্যাসিফিক-এর জার্নালে প্রকাশিত নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, এসব ঝলক সম্ভবত পৃথিবীর উচ্চ কক্ষপথে থাকা প্রতিফলিত বস্তুর কারণে হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, ওই বস্তুগুলো সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে এমন উজ্জ্বল হয় যে, তা ইউএফও দেখার ঘটনার সাথে মিলে যায়।
গবেষণার প্রধান লেখক বিত্রিস ভিলারোয়েল এবং স্টিফেন ব্রুহল বলেন, আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পারমাণবিক পরীক্ষার একদিন পর আলোর ঝলকগুলো ঘটার সম্ভাবনা ৬৮ শতাংশ বেশি। তারা আরও বলেন, প্রতিটি ইউএফও দেখার ঘটনার সঙ্গে গড়ে ৮.৫ শতাংশ করে এমন আলোর উপস্থিতি বেড়েছে।
ব্রুহল জানিয়েছেন, আলো ও পারমাণবিক পরীক্ষার মধ্যে এই নির্দিষ্ট সময়িক সম্পর্ক সত্যিই আশ্চর্যজনক। এটি হয়তো এমন কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে, যার প্রকৃতি আমরা এখনো পুরোপুরি বুঝতে পারিনি।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, এসব আলোর ঝলক পৃথিবীর উচ্চ কক্ষপথে থাকা উচ্চ প্রতিফলিত সমতল বস্তু যেমন ধাতব উপাদান বা মহাকাশীয় আবর্জনা থেকে আসতে পারে। তবে এসব ছবি তোলা হয়েছিল এমন সময়ে, যখন এখনকার মতো কোনো উপগ্রহ বা মহাকাশযান পৃথিবীর কক্ষপথে ছিল না।
তাই গবেষকেরা বলছেন, এটি হয়তো পারমাণবিক বিস্ফোরণের কারণে সৃষ্ট কোনো অজানা বায়ুমণ্ডলীয় ঘটনার ফল, কিংবা মানবসৃষ্ট কোনো বস্তুর প্রতিফলন হতে পারে। যদিও কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এসব পুরনো ফটোগ্রাফিক প্লেটে থাকা আলোর দাগ কেবল ছবির ত্রুটি বা পুরোনো উপকরণের দূষণও হতে পারে।
গবেষকেরা বলছেন, এই ফলাফল ইউএফও-সম্পর্কিত রহস্য এবং পারমাণবিক পরীক্ষার প্রভাব বোঝার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। এখন প্রয়োজন আরও গভীর ও আধুনিক গবেষণা, যা হয়তো এই অজানা আলোর উৎসের প্রকৃত রহস্য উন্মোচন করতে পারবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল