ভয়াবহ টাইফুন ‘কালমায়েগি’ ফিলিপাইনে তাণ্ডব চালিয়ে ১১৪ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়ে এবার আঘাত হেনেছে ভিয়েতনামে। দুই দেশে এই ঝড়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ।
ভিয়েতনামের জাতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বৃহস্পতিবার কালমায়েগির বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১৪৯ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছায়। প্রবল ঝড়ে বহু ঘরের ছাদ উড়ে গেছে, গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়েছে। উপকূলীয় এলাকায় ১০ মিটার উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়ছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাইফুনের কারণে দেশটির ছয়টি বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়েছে সরকার এবং গিয়া লাই প্রদেশে ২ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এটি চলতি বছরের ১৩তম এবং অন্যতম শক্তিশালী টাইফুন বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।
ভিয়েতনামের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উদ্ধার তৎপরতার জন্য ২ লাখ ৬৮ হাজার সেনাসদস্য প্রস্তুত রয়েছে। সরকার শঙ্কা করছে, মধ্যাঞ্চলীয় নিম্নভূমিতে বন্যা ও কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। কফি উৎপাদনের জন্য পরিচিত সেন্ট্রাল হাইল্যান্ডস অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
প্রবল ঝড়ের কারণে পর্যটননগরী হোই আনের কুয়া দাই সৈকতের হোটেল ও ঘরবাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে হুয়ের আশপাশের কৃষকেরা আগের বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবার নতুন দুর্যোগের মুখে পড়েছেন। চলতি সপ্তাহে ওই অঞ্চলে বন্যায় ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
স্থানীয় কৃষক নগুয়েন ভ্যান রিন বলেন, “গত বন্যায় আমার সব গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি মারা গেছে। কালমায়েগি এবার চতুর্থবারের মতো বন্যা আনবে—আমি ভীষণ ভয় পাচ্ছি।” তিনি জানান, ঘর থেকে নৌকা বেয়ে বের হতে হচ্ছে, রাস্তাগুলো পানিতে ডুবে আছে।
ভিয়েতনামে প্রবেশের আগে ফিলিপাইনের সেবু প্রদেশে ভয়াবহ তাণ্ডব চালায় টাইফুনটি। বন্যার পানি নামার পর দেখা গেছে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পুরো অঞ্চল—অগণিত ঘরবাড়ি মাটিতে মিশে গেছে, রাস্তাজুড়ে উল্টে থাকা গাড়ি ও ভাঙা স্থাপনা।
ফিলিপাইনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানিয়েছে, এখনো ১২৭ জন নিখোঁজ। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে বিশাল ধ্বংসস্তূপ। দেশটির জ্যেষ্ঠ বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা র্যাফি আলেজান্দ্রো বলেন, “সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন ধ্বংসস্তূপ সরানো। নিখোঁজদের খোঁজ পেতে দ্রুত পরিষ্কার করা জরুরি।”
এর মাত্র এক মাস আগে সেবুতে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয় এবং হাজারো পরিবার গৃহহীন হয়। সেই ক্ষত শুকানোর আগেই আবারও ভয়াবহ দুর্যোগে বিপর্যস্ত দেশটি।
ফিলিপাইনের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় মিন্দানাও দ্বীপের পূর্ব দিকে নতুন একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যা আগামী সপ্তাহের শুরুতে টাইফুনে পরিণত হয়ে আবারও আঘাত হানতে পারে।
আজ সেবুর অনেক বাসিন্দা ঘরে ফিরে দেখেছেন, তাঁদের সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। কেউ কাদা সরিয়ে ঘর পরিষ্কার করছেন, কেউ বা ধ্বংসস্তূপ থেকে ধাতব টুকরো তুলে বিক্রির চেষ্টা করছেন। তালিসাই শহরের লিজা বেকুস বলেন, “আমার সবকিছু ভেসে গেছে, শুধু মেঝেটা টিকে আছে। সাত সন্তানকে খাওয়ানোর জন্য এখন ধাতব টুকরো বিক্রি করছি।”
সূত্র: রয়টার্স
বিডি প্রতিদিন/আশিক