১১ বছরের জিসান রাজধানীর আফতাবনগরে আড্ডার মোড়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাচ্ছিল। এ সময় একটি বাইকের সঙ্গে দুর্ঘটনার শিকার হয় গতকাল বিকালে। বাইকার মোসলেম আহমেদ ও জিসান দুজনই আহত হয়। গুরুতর কিছু না হলেও মোসলেম আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এখন আমার বাইক ঠিক করাতে টাকা লাগবে। এই টাকা কে দেবে? শিশু জিসানের হাত কেটে রক্ত পড়তে দেখা যায়। সে জানায়, তার বাবা নেই। মা ঘরে অসুস্থ, তাই সে নিজেই রিকশা গ্যারেজ থেকে চাচাকে বলে রিকশা নিয়ে বের হয়েছে। এমন দৃশ্য এখন রাজধানীতে অহরহ দেখা যাচ্ছে। আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনা। দখল করে রাখছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সব সড়ক। এ ছাড়া নিয়মনীতি না মেনে এসব রিকশার চালকের আসনে বসছে শিশু-কিশোররা। নিয়মকানুন না জানার কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
ব্যাটারিচালিত রিকশার কাছে যেন অসহায় ট্রাফিক পুলিশ। হাইকোর্ট থেকে একাধিকবার নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব বলছে, গত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনার শতকরা ১৩ ভাগ দায়ী ব্যাটারিচালিত রিকশা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কর্মসংস্থানের ঘাটতির কারণে ফিডার রোডগুলোতে আমরা মানবিক কারণে একটু ছাড় দেই। অন্যথায় আবার অপরাধ বেড়ে যাবে। কারণ, তাকে কিছু না কিছু করে পেট চালাতে হবে। বাস্তবতার খাতিরে বললেও এটা বৈধ হয়ে যায় না। সাম্প্রতিক সময়ে সড়কের ২৫ শতাংশ হচ্ছে ভিআইপি সড়ক। এগুলোতে আমরা চলতে দিচ্ছি এটিও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। ৬৩৩ জায়গায় ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এর মধ্যে ১০টি পয়েন্টে আমাদের ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করতে হয়। ৪ হাজার ২০০ জন হচ্ছে আমাদের লোকবল। এত কম সংখ্যক লোকবল নিয়ে ঢাকা শহরের প্রত্যেকটি জায়গায় ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ করা আসলেই কঠিন।’ বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুল নেওয়াজ বলেন, শিশুদের হাতে ব্যাটারিচালিত রিকশা দেওয়া মানে শিশুটিসহ অন্যদের জীবনও বিপন্ন করা। এ অবস্থায় সব ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ করা যেমন প্রয়োজন তেমনই একটি কাঠামো ও সীমানা নির্ধারণ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুর্বল আইনশৃঙ্খলার সুযোগ নিচ্ছেন অটোরিকশার চালকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আক্তার বলেন, সারা বিশ্বে শিশুশ্রম বন্ধ ঘোষণা হলেও দেশে শিশুশ্রম চলছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় ১৮ বছর পর্যন্ত শ্রম নিষিদ্ধ।
তবে বাবা-মা যখন শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকেন তখনই আমাদের দেশে বাচ্চাদের শিশুশ্রমের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়।