ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বিজুলিয়া নীলকুঠিতে হারিয়ে গেছে এক পুরনো সমাধির স্মৃতি। এই সমাধিস্থলটি ছিল নীলকুঠির অধ্যক্ষ রিচার্ড ডি ডাম্বেলের স্ত্রী হান্নাহ মেরিয়ানের, যাকে ১৮৮১ সালের ৮ জানুয়ারি এখানে সমাহিত করা হয়েছিল। তার সমাধিফলকে লেখা ছিল এক মর্মস্পর্শী এপিটাফ; যা আজ বিলুপ্ত। আশির দশকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থিওলজিতে এমএ পাস করে খ্রিস্টধর্ম প্রচারে শৈলকুপায় এসেছিলেন জেমস সিমসন। স্থানীয় মেজর মেহেরুল হাসান তাকে এই সমাধিটি দেখিয়েছিলেন। সিমসন এপিটাফটি দেখে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে আর্কাইভে খোঁজ নিয়ে ডাম্বেল সাহেবের বংশধরদের এই সমাধিস্থলের খবর দেবেন।
তার কথার সূত্র ধরে ১৯৯৭ সালে রিচার্ড ডি ডাম্বেলের এক বংশধর রিচার্ড ডি কনিক স্মিথ, বিজুলিয়া গ্রামে এসেছিলেন। তিনি তার দাদা রিচার্ড ডি ডাম্বেলের ডায়েরি থেকে বিজুলিয়া গ্রামের খোঁজ পেয়েছিলেন এবং জেমস সিমসনের কাছ থেকে এই এলাকার অবস্থান জেনেছিলেন। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল হান্নাহর কফিনটি ইংল্যান্ডে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, গ্রামের মানুষ তাকে সমাধিটি বা এপিটাফটি দেখাতে পারেননি। ফলে ভগ্নহৃদয়েই তাকে ইংল্যান্ডে ফিরে যেতে হয়েছিল। তিনি গ্রামবাসীকে তার ঠিকানা দিয়ে গিয়েছিলেন এবং অনুরোধ করেছিলেন, যদি সমাধির সন্ধান পাওয়া যায়, তবে যেন তাকে জানান হয়। এ ঘটনাটি সে সময় বিবিসি বাংলা সার্ভিসে ‘দাদীর কবরের সন্ধানে’ শিরোনামে প্রতিবেদন হিসেবেও প্রচারিত হয়েছিল, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। স্মৃতিবিজড়িত সেই মার্বেল পাথরের এপিটাফটিতে লেখা ছিল :
HANNAH MARIAN the dearly loved wife of RICHARD de DOMBAL who died at Bezoolia on the 8th January 1881 aged 47 years Deeply lamented by her sorrowing husband and children and greatly respected by all who knew her She loved her Saviour and gloried in Him..
বিজুলিয়া নীলকুঠির এই হারিয়ে যাওয়া সমাধি এবং এর এপিটাফ শুধু একটি পারিবারিক ইতিহাস নয়, এটি ঔপনিবেশিক আমলের এক নীরব সাক্ষী, যা আজও এই অঞ্চলের ইতিহাসের পাতায় এক রহস্যময় অধ্যায় হিসেবে রয়ে গেছে। ভবিষ্যতে এই সমাধির সন্ধান মিলবে কিনা, তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে এখনো কৌতূহল বিদ্যমান।