ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের খেলা দেখেন না; শুধু বাংলাদেশের খেলা থাকলেই দেখেন। যে কোনো দেশের বিপক্ষে খেলা থাকলেই আকাশসম চাপ বোধ করেন। মনে হয় হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যাবে যখন তখন। রাবীদ ইমাম। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে পরিচিত মুখগুলোর একজন। জাতীয় দলের ক্রিকেটার নন, কিন্তু আমিনুল ইসলাম বুলবুল, হাবিবুল বাশার, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মোহাম্মদ আশরাফুল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদদের চেয়ে পরিচিত কম নন। একসময় ক্রিকেট খেলতেন। বিকেএসপির প্রথম ব্যাচের ছাত্র। তাঁর ব্যাচের অনেকেই জাতীয় দলে ক্রিকেট খেলেছেন। নিজে না খেললেও জাতীয় দলের সঙ্গী হয়ে দেশবিদেশ ভ্রমণ করছেন ২০০৬ সাল থেকে। এখন বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার। দীর্ঘ ১৯ বছরের ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের প্রায় ১০০ টেস্ট, আড়াই শর ওপর ওয়ানডে ও ১৬০-১৭০টি টি-২০ ম্যাচ দেখেছেন দলের সঙ্গী হয়ে। এ দীর্ঘ সময়ে রাবীদের মনে হয়েছে, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে মানসিকতায়, ‘১৯৮৬ সাল থেকে ওয়ানডে, ২০০০ সাল থেকে টেস্ট খেলছে। এ সময়ে দেশের ক্রিকেটে একটা ম্যাসিভ পরিবর্তন হয়েছে। আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে মানসিকতায়। ক্রিকেটাররা এখন প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের চোখে চোখ লেখে লড়াই করছে।’ বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে ১৫৪টি, ওয়ানডে ৪৪৯টি ও টি-২০ ১৯৪টি। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম জয় ২০০৫ সালে চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। রাবীদের দৃষ্টিতে টেস্টে দেশের পরিবর্তন শুরু ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে, ‘সেবার অস্ট্রেলিয়া সফরে ডারউইন ও কেয়ার্নসে দুটি টেস্টই হেরেছিল বাংলাদেশ। হারলেও অস্ট্রেলিয়ার মতো বিশ্বসেরা দলের বিপক্ষে খেলার পর বিশ্বাস করতে শুরু করে-আমরাও পারি। ওই বিশ্বাসটুকুই বাংলাদেশকে এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা করে দিয়েছে। ভালো খেলার ক্ষুধা তৈরি হয়েছে ক্রিকেটারদের মাঝে।’ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পরিবর্তনটা দেখেছেন ২০০৭ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর, ‘২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহরা খেলার পর ক্রিকেটাররা আত্মবিশ্বাসী হয়েছে। তারা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল, যে কোনো দলকে হারানোর ক্ষমতা রাখে। সেবার ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বড় দলগুলোকে হারিয়েছিল। সেই আত্মবিশ্বাস পুরো দলকে মানসিকভাবে এগিয়ে দিয়েছে অনেক। এখন ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে ওয়ানডে ক্রিকেটে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুশফিকরা নিজেদের তৈরি করে নিয়েছে। টি-২০ ক্রিকেটে ভালো করতে হলে অনেক বেশি ইমপ্রোভাইজিং ক্রিকেট খেলতে হবে।’ দলের সাফল্য নির্ভর করে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিন বিভাগের ওপর। বাংলাদেশ ক্রিকেটের উত্থান দেখা রাবীদের মতে সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয়েছে বোলিং বিভাগে, ‘বোলিং বিভাগে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে পেস বোলিং বিভাগের উন্নতি অনেক। নাহিদ রানা নিয়মিত ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করছে। একসময় যা ছিল কল্পনাতীত। কন্ডিশন অনুযায়ী আমাদের ম্যাচ জেতানো স্পিনার রয়েছে।’ ব্যাটিং নিয়ে হতাশ না হলেও সন্তুষ্ট নন পুরোপুরি, ‘আমাদের ব্যাটিং গভীরতা এখনো তৈরি হয়নি। খেয়াল করলে দেখবেন, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ডের নিজস্ব একটা ব্যাটিং স্টাইল রয়েছে। প্রায় ৪০ বছর ধরে ওয়ানডে, ২৫ বছর ধরে টেস্ট খেলছি, দুঃখজনক হলেও সত্যি, ব্যাটিংয়ে আমরা নিজস্ব কোনো স্টাইল তৈরি করতে পারিনি। এটা করতে না পারা পর্যন্ত ব্যাটিংয়ের উন্নতি সম্ভব নয়।’ এজন্য কী করা উচিত বিসিবির? রাবীদ মনে করেন, ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য অবশ্যই একটা টার্গেট ঠিক করতে হবে, ‘শুধু ক্রিকেট নয়, যে কোনো খেলাতেই উন্নতি করতে সবচেয়ে বেশি জরুরি টার্গেট সেট করা।’
ক্রিকেট বোর্ডেরও উচিত একটি টার্গেট সেট করা, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ক্রিকেটটাকে কোথায় দেখতে চায়। টি-২০ কিংবা ওয়ানডেতে হয়তো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারবে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটটাই হচ্ছে মূল। এ ফরম্যাটে ভালো করলেই বাকি দুটিতে ধারাবাহিকতা সম্ভব। এ ছাড়া স্কাউটিংটা জরুরি। পুরে দেশ থেকে ভালোমানের ক্রিকেটার খুঁজে বেরা করতে স্কাউটিং করতে হবে।’
বিসিবির বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল দেশের অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেছেন। আশরাফুল সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান। তার পরও তামিমকেই দেশের সেরা ব্যাটার মনে করেন রাবীদ। দেশের সেরা ক্রিকেটার সাকিব, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাঁর দেখা সেরা টেস্ট ইনিংস রাওয়ালপিন্ডিতে লিটন দাসের সেঞ্চুরি, ‘২৬ রানে ৬ উইকেটের পতনের পর লিটন ১৩৮ রানের ইনিংস খেলেছিল। আমার দেখা সেরা ইনিংস। ওয়ানডেতে সেরা ইনিংস মাহমুদুল্লাহর। কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৩ রানে ৪ উইকেটের পতনের পর ১০২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিল মাহমুদুল্লাহ। টেস্টে তাইজুল ইসলাম, নাহিদ রানার দুটি স্পেল এবং ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাসকিনের ৫ উইকেট।’