সেন্টমার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ও বিপন্ন কাছিম রক্ষায় বেওয়ারিশ ৩ হাজার কুকুরকে বন্ধ্যত্ব করা হচ্ছে। গত ৮ এপ্রিল ২৭ সদস্যের একটি দল সেন্টমার্টিনে কাজ শুরু করেছে। তাদের মধ্যে তিনজন বিদেশিসহ পাঁচজন পশু চিকিৎসক। সরকারের নেওয়া কুকুর বন্ধ্যাকরণের এ উদ্যোগ পরিবেশ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি সংস্থা ‘অভয়ারণ্য’। অভয়ারণ্যের চেয়ারম্যান রুবাইয়া আহমদ জানান, সেন্টমার্টিনের প্রতিটি ঘরে চার-পাঁচটি কুকুর পাওয়া গেছে। এভাবে চলতে থাকলে দুই বছর পর প্রতি ঘরে ২০টি কুকুর হবে। তখন সংকট আরও বাড়বে। কুকুর স্থানান্তর কিংবা নিধন আইনিভাবে নিষিদ্ধ। তাই কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। ৩ হাজার কুকুরকে বন্ধ্যা করা হচ্ছে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, দ্বীপে লোকসংখ্যা ১০ হাজার ৭০০। কুকুর আছে ৭ হাজারের বেশি। কুকুরের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে দ্বীপে ডিম পাড়তে আসা কাছিম কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া কোনো একটি প্রজাতির অনিয়ন্ত্রিত বংশবৃদ্ধিও প্রাকৃতিক খাদ্যচক্রের জন্য হুমকি বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা। যেখানে মানুষের খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে সেখানে কুকুরের খাদ্যাভাব আরও মারাত্মকভাবে দেখা দিতে পারে। গত অক্টোবর-নভেম্বরে কুকুরের খাদ্যাভাব দেখা দিলে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কুকুরের জন্য মানবিক সহায়তা দিয়ে সেন্টমার্টিন যান। প্রাণে বাঁচে কুকুরগুলো। পরিবেশ অধিদপ্তর-কক্সবাজারের উপপরিচালক জমির উদ্দিন জানান, সেন্টমার্টিনে প্রথম ধাপে ১ হাজার কুকুরকে বন্ধ্যাকরণের আওতায় আনা হয়েছে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ডওয়াইড ভেটেরিনারি সার্ভিস (ডব্লিউভিএস)’।
অভয়ারণ্য জানিয়েছে, গত জানুয়ারি মাসে তাদের কর্মীরা দ্বীপের উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, মাঝেরপাড়া, পশ্চিমপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামের ২০০ ঘরে গিয়ে কুকুরের জরিপ পরিচালনা করেন। জরিপ অনুযায়ী, ৩০ শতাংশ পরিবারে কুকুর রয়েছে। অবশিষ্ট ৭০ শতাংশ বেওয়ারিশ কুকুর। এর আগে ২২ জানুয়ারি রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বন ভবনে ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপে কুকুরের সংখ্যা গণনা ও সচেতনতা জরিপ : অলিভ রিডলি কচ্ছপ সংরক্ষণ এবং জীববৈচিত্র্য নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে অংশ নিয়ে বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার অংশ হিসেবে সেন্টমার্টিন দ্বীপে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে বলেন, দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হবে।
এ বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করা হবে। পরবর্তী ধাপগুলোতে ২০২৫ সালের মে-জুন মাসে ৫০ শতাংশ স্ত্রী কুকুরের বন্ধ্যাকরণ, বর্ষাকালে নিবন্ধিত খাদ্য বিতরণ এবং নভেম্বরের মধ্যে ৯০ শতাংশ স্ত্রী কুকুরের বন্ধ্যত্ব নিশ্চিত করা হবে। ২০২৬ সালের মধ্যে সব স্ত্রী কুকুরের বন্ধ্যাকরণ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ শতাংশ স্ত্রী কুকুরের বন্ধ্যাকরণ সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।