ফেনী শহরের ট্রাংক রোডে কয়েক গজ ব্যবধানে পাশাপাশি রয়েছে কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদ ও জয়কালী মন্দির। ১৮৭৬ সালে ত্রিপুরার রাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর ফেনী শহরে মন্দির ও মসজিদের জন্য ৫০ শতাংশ করে জমি বরাদ্দ দেন।
প্রতিদিন ফজরের সময় মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে মিষ্টি আজান শেষে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করে চলে যাওয়ার পর পাশের মন্দিরে শোনা যায় উলুধ্বনি। নিজ নিজ ধর্ম পালনে দায়িত্বশীল আচরণ করছেন তারা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ এটি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এখানকার মানুষ শান্তিপ্রিয়। কখনো এখানে বিশৃঙ্খলা হয়নি। সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করেন। সবাই সম্প্রীতি বজায় রেখে মসজিদ ও মন্দিরে নিজ নিজ ধর্মের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তাদের প্রত্যাশা যুগ যুগ ধরে চলতে থাকবে এই সম্প্রীতি। মসজিদে নামাজ পড়ে বেরোনোর পথে কথা হয় মুসল্লি আজিজ আহমদীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মসজিদে নামাজ আদায় করি আমরা। পাশেই মন্দির রয়েছে। তাদের পূজা-অর্চনায় আমাদের নামাজ আদায়ে কখনো সমস্যা হয়নি। সবাই দায়িত্বশীল।’ মন্দিরটির পুরোহিত নিমাই চক্রবর্তী বলেন, ‘কোনো বিবাদ ছাড়াই সম্প্রীতির সঙ্গে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছে দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ।’ এখানে উন্মুক্ত স্থানে ওয়াজ মাহফিল ও জানাজা নামাজও আদায় হয়।
মন্দির কমিটির সভাপতি তপন কুমার দাশ বলেন, ‘এই রকম পাশাপাশি মসজিদ-মন্দির খুব কম রয়েছে। এখানকার হিন্দু-মুসলমানরা মিলেমিশে আছি। ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন নিয়ে কখনো বিরোধ বা সংঘাত হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, মুসলিমরা ঈদের সময় মসজিদে নামাজ আদায় করছেন।
আমরা পূজার সময় সুন্দরভাবে পূজা করছি। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ভ্রাতৃত্বপূর্ণভাবে আমরা যার যার ধর্ম পালন করছি। বিপদে-আপদে আমরা সব সময়ই সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে এটি যেন নিদর্শন হয়ে থাকে। এমন মূল্যবোধ ধারণ করলে পৃথিবীতে কোথাও অশান্তি হবে না।’ ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, ‘শত বছরেরও বেশি সময় ধরে পাশাপাশি মন্দির-মসজিদের অবস্থান। এখানে যে যার ধর্ম পালন করছেন। এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি অনন্য নিদর্শন।