তুরস্ক ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে সামরিক সহযোগিতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। তুরস্ক তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ৪৮টি ফাইভথ-জেনারেশন স্টিলথ যুদ্ধবিমান ‘KAAN’ ইন্দোনেশিয়ায় রপ্তানির ঘোষণা দিয়েছে। এই চুক্তিকে তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য একটি “ঐতিহাসিক মাইলফলক” হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান Turkish Aerospace Industries (TAI) এই বিমানগুলো তৈরি করছে। ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ১০ বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এসব যুদ্ধবিমান হস্তান্তর করা হবে। এর মাধ্যমে KAAN যুদ্ধবিমান প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করলো।
চুক্তি অনুযায়ী, শুধু রপ্তানিই নয়- KAAN বিমান তৈরির প্রকল্পে ইন্দোনেশিয়ার কারিগরি ও প্রযুক্তিগত অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটি শুধুই ব্যবহারকারী নয়, বরং যৌথ উন্নয়ন প্রকল্পের অংশীদার হিসেবেই এই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে।
KAAN একটি আধুনিক, স্টিলথ ক্ষমতাসম্পন্ন ৫ম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। এটি সুপারসনিক গতি সম্পন্ন, উন্নত রাডার ফাঁকি দেওয়ার প্রযুক্তি, মাল্টিরোল যুদ্ধ ক্ষমতা ও সাইবার প্রতিরক্ষা সহায়ক সফটওয়্যারে সজ্জিত। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিমানটির প্রথম পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান এবং ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রাবোও সুবিয়ান্তো। প্রেসিডেন্ট এরদোগান এই চুক্তিকে তুরস্কের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার “নতুন অধ্যায়” হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, “এই অর্জন প্রমাণ করে যে আমরা আর শুধু ক্রেতা নই, এখন রপ্তানিকারকও বটে।”
ইন্দোনেশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে সামরিক ও প্রযুক্তিগত সম্পর্ক গত কয়েক বছর ধরেই ক্রমাগত ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। এর আগে ইন্দোনেশিয়ায় তুরস্কের ড্রোন উৎপাদন, রাডার প্রযুক্তি এবং ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নসহ একাধিক প্রকল্পে যৌথভাবে কাজ শুরু হয়েছে। KAAN যুদ্ধবিমান চুক্তি সেই সম্পর্ককে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল।
চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৮ সালের মধ্যেই KAAN যুদ্ধবিমানের প্রথম ব্যাচ তুর্কি বিমানবাহিনীতে যুক্ত হবে। এরপর নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ইন্দোনেশিয়ার বিমানবাহিনী তাদের বরাদ্দকৃত বিমানগুলো হাতে পাবে।
এই যুদ্ধবিমান রপ্তানি শুধু আর্থিকভাবে লাভজনকই নয়, এটি তুরস্কের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। প্রতিরক্ষা খাতে তুরস্কের বৈশ্বিক অবস্থান সুদৃঢ় করতে এই চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সূত্র - এপি নিউজ।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ