নিউজিল্যান্ডের চিকিৎসক এড্রিক বেকার। টাঙ্গাইলের মধুপুরে গড়ে তুলেছিলেন কাইলাকুড়ি স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্র। স্থানীয়দের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন ‘ডাক্তার বেকার ভাই’। তাঁর হাসপাতাল পরিচিতি পায় ‘গরিবের হাসপাতাল’ হিসেবে। তাঁর মৃত্যুর পর এখন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক দম্পতি জেসিন এবং মেরিন্ডি হাসপাতালটির হাল ধরেছেন...
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় পিছিয়ে পড়া পাহাড়ি লাল মাটির এলাকায় ডা. এড্রিক বেকার গড়ে তুলেছিলেন কাইলাকুড়ি স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্র। যা স্থানীয়দের কাছে গরিবের হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত। শব্দদূষণ কোলাহলমুক্ত নির্মল পরিবেশে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে ভিড় করছেন। এড্রিক বেকারের মৃত্যুর পর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক দম্পতি জেসিন এবং মেরিন্ডি হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। মানবিকতায় পূর্ণ চিকিৎসক-নার্স-কর্মচারীদের সেবা আর মনোরম পরিবেশই অর্ধেক রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। হাসপাতালটির কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সরকারি, বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন বলে হাসপাতালের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। জানা যায়, প্রকৃতির কোলে অরণ্যবেষ্টিত গ্রামের নাম হাগুড়াকুড়ি। মধুপুর সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ গ্রামটি। এ গ্রামে প্রতিদিন ছুটে আসে শত শত রোগী। শুধু আধুনিক চিকিৎসা নয়, আন্তরিক সেবার টানেই বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিয়ত ছুটে আসছেন রোগীরা। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের বর্তমান নাম ডক্টর বেকারস অর্গানাইজেশন ফর ওয়েল-বিং। এ প্রতিষ্ঠান টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার দারিদ্র্যপীড়িত হিন্দু, মুসলিম, গারো অধ্যুষিত এলাকায় স্থাপন করেছেন নিউজিল্যান্ডের বাসিন্দা ডা. এড্রিক বেকার। যিনি ডা. বেকার ভাই নামে দেশজুড়ে পরিচিত ছিলেন। সরেজমিন দেখা যায় রোগীরা চিকিৎসা নেওয়ার জন্য ভিড় করছেন। কেউ টিকিট নিচ্ছেন, কেউ চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন, কেউ ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাচ্ছেন আবার কেউ এসেছেন চোখের চিকিৎসা নিতে। যক্ষ্মা রোগীদের জন্য রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। অনেক জটিল ও কঠিন রোগের প্রাথমিক পরামর্শ দিয়ে রেফার করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে অন্য মাটির ঘরে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও চিকিৎসাসেবা নিতে ভিড় করতে দেখা যায়। হাসপাতালে কর্মরত স্টাফ ও চিকিৎসাসেবা দেওয়া ব্যক্তিরা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা এখানে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। সুবিধাবঞ্চিত পিছিয়ে পড়া দরিদ্র মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করার পাশাপাশি রোগীদের অবস্থা বুঝে হাসপাতালে ভর্তি রেখে সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে।’ রোগীরা বলেন, এ হাসপাতালের সুনাম শুনেই চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এ হাসপাতালের পরিবেশ ও সেবার মান, সবই ভালো। ডাক্তার বেকারের গরিবের হাসপাতালের সেবা পেয়ে খুশি আমরা। স্থানীয়ভাবে কোনো সমাধান না পাওয়ায় এখানে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য এসেছি।’ হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত জীবন বর্মণ বলেন, ‘১৭ বছর ধরে আমি এখানে রোগীদের নিয়ে কাজ করছি। বেশির ভাগ রোগীই গ্রাম এবং নিম্ন অঞ্চল থেকে আসেন। বেশি জরুরি রোগীদের ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।’ আয়শা আক্তার বলেন, ‘আমি ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকি। নতুন রোগীদের কাছ থেকে ৩০ টাকা এবং পুরোনো রোগীদের থেকে ১৫ টাকা নেওয়া হয়।’ ভাতকাড়া থেকে আসা রোগী আরাফাত রহমান বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর ধরে ডায়াবেটিস সমস্যায় ভুগছি। কিন্তু জামালপুরে ডাক্তার দেখিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এখানে চিকিৎসার মান ভালো শুনে আমি ডাক্তার দেখানোর জন্য এসেছি। এখানকার সবার ব্যবহার খুবই ভালো।’ এ ব্যাপারে কাইলাকুড়ি স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক প্রিজন নংমিন বলেন, ‘এখানে আসা রোগীদের শতভাগই দরিদ্র। আমাদের প্রয়োজন সরকারি, বেসরকারি সহযোগিতা। তাহলে সেবা আরও উন্নততর করা সম্ভব হবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক দম্পতি জেসিন এবং মেরিন্ডি বলেন, ‘ডাক্তার বেকার ভাইয়ের মৃত্যুর পর গরিব মানুষদের আমরা চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। এতে আমাদের অনেক ভালোই লাগছে।’