রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডের পিনাক্যাল পাওয়ার লিমিটেডের সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নেওয়ার জন্য গতকাল দুপুরে ছিল গাড়ির দীর্ঘ লাইন। এই স্টেশনে ১৫ পিএসআই গ্যাসের চাপ থাকার কথা, কিন্তু এদিন দুপুর পর্যন্ত ছিল ৩ পিএসআই। গ্যাসের চাপ না থাকলে স্টেশন কর্তৃপক্ষ গ্যাস দেওয়া বন্ধ রাখে, ঝুলিয়ে রাখে ‘গ্যাস নেই’ সাইনবোর্ড। আগে এখানে সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শিফটে যেখানে ৬০০-এর ওপর যানবাহনে গ্যাস দেওয়া যেত এখন সংকটের কারণে এর অর্ধেক যানবাহন গ্যাস নিতে পারছে। স্টেশনটির গ্যাসের পাঁচটি নজেলের মধ্যে তিনটিই বন্ধ ছিল। পিনাক্যাল স্টেশনে দায়িত্বরত কর্মকর্তা শামসোজ্জোহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত তিন-চার মাসে গ্যাসের সংকট তীব্র হয়েছে। আগে একটি প্রাইভেট কারে যেখানে ৬০০ টাকার গ্যাস দেওয়া যেত এখন ৩০০ টাকারও দেওয়া যাচ্ছে না। দিনে গ্যাসের চাপ থাকেই না। রাত ১১টার দিকে কিছুটা পাওয়া যায়।’
মিরপুর ১২ নম্বরের সিরামিক ওয়ার্কস সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গতকাল গ্যাস একেবারেই ছিল না। এজন্য স্টেশনটির প্রবেশমুখ বন্ধ রাখা হয়। আশপাশের প্রাইভেট কার চালকরা এই স্টেশন থেকে গ্যাস না পেয়ে ফিরে যান। গ্যাসসংকটের এই চিত্র এখন রাজধানীর অনেক সিএনজি ফিলিং স্টেশনের। বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারহান নূর বলেন, সরকারের সঙ্গে আমাদের চুক্তি অনুযায়ী ১৫ পিএসআই গ্যাস সরবরাহ করার কথা। কিন্তু অনেক বছর ধরেই তা দেওয়া হচ্ছে না। আগে ৫ থেকে ৭ পিএসআই গ্যাসের চাপ পেতাম। এখন দিনে ২ থেকে ৩ পিএসআইয়ের ওপর উঠছেই না। সরকার এখন শিল্প খাতেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। গ্যাসসংকটের অবস্থা এমন চলতে থাকলে ভবিষ্যতে অনেক স্টেশন মালিক ব্যবসা চালাবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। গ্যাসের তীব্র সংকটে নাকাল রাজধানীবাসী এখন বেশি ভুগছেন আবাসিকের লাইনের চুলায়। রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার বাসিন্দারা গ্যাসের অভাবে দৈনন্দিন কাজ সারতে পারছেন না। আগে শীতকালে সমস্যা হলেও এখন গরমেও গ্যাসের সংকট হচ্ছে। দিনের রান্না রাতে করছেন নগরবাসী। গভীর রাতে পরের দিনের খাবার রাঁধছেন গৃহিণীরা। দক্ষিণখানের গৃহিণী সুমনা শারমিন বলেন, ‘এখানে দিনে লাইনের চুলায় গ্যাস পাই না। গভীর রাতে আসে। তখন খাবার বানাই। পরদিন স্বামী ও সন্তানদের ঠান্ডা খাবার খেতে দিই। পরিস্থিতি সামলাতে ইলেকট্রিক চুলা কিনেছি, কিন্তু এতে মাস শেষে খরচ বেড়ে গেছে।’
মিরপুর কাজীপাড়ার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষিকা হোসনে আরা বলেন, ‘আমাদের এলাকায় দীর্ঘদিন গ্যাস নেই। বিপদে পড়ে ইলেকট্রিক চুলা কিনেছি, কিন্তু আমার মা সেটি ব্যবহার করতে পারেন না।’ শিল্প উদ্যোক্তারা জানান, কারখানায় গ্যাসের চাপ ১৫ পিএসআই থাকার কথা। কিন্তু এখন পাওয়া যাচ্ছে ৩ থেকে ৫ পিএসআই। সিএনজি, এলপিজি ও ডিজেল দিয়ে উৎপাদন ধরে রাখতে গিয়ে মালিকদের উৎপাদন খরচ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘প্রায় সময় শিল্পাঞ্চলে গ্যাসের চাপ থাকে না। এখন মালিকরা ৩৩ শতাংশ গ্যাস পাচ্ছেন। যে পরিমাণ উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল তা হচ্ছে না। একটি কারখানার সক্ষমতার ৮০ শতাংশ উৎপাদন যদি করতে না পারে তাহলে শিল্প মালিকদের ক্ষতি হয়। এ কারণে এরই মধ্যে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিস অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি মো. শাহরিয়ার বলেন, ‘শিল্প এলাকাগুলোতে অনেক জায়গায় গ্যাস পরিস্থিতি এখনো ভালো না। সরকার শিল্প খাতে গ্যাসের সরবরাহ আরেকটু না বাড়ালে এই খাতের গতি কমে যাবে। সাভার থেকে মানিকগঞ্জের দিকের শিল্প এলাকায় গ্যাসের চাপ ভালো নেই। আর দুপুর ও সন্ধ্যার দিকে গ্যাসের সংকট বেশি হচ্ছে। গ্যাসের অবৈধ লাইন অপসারণ হলে শিল্প খাতে গ্যাসের সরবরাহ আরেকটু বৃদ্ধি পাবে। গ্যাসের যে সরবরাহ এখন পাচ্ছি তা দিয়ে আমরা কোনোভাবে টিকে আছি।’