পাহাড়ে আবারও অশান্তি সৃষ্টির ভয়ংকর পরিকল্পনা করছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ। আধিপত্যবাদী ভারত ও তাদের এদেশীয় এজেন্টদের মদতে পাহাড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে বিচ্ছিন্নতাবাদী এ সংগঠনটি। খাগড়াছড়ির গুইমারা ও লক্ষ্মীছড়ি এলাকার পার্শ্ববর্তী বর্মাছড়িতে সেনাবাহিনীর একটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনে বাধা দিচ্ছে ইউপিডিএফ। অক্টোবরের ৩০ তারিখের মধ্যে ইউপিডিএফের নেতৃত্বে ক্যাম্প স্থাপনের বিরোধিতা করে ৮-১০ হাজার লোকের জনসমাবেশের পরিকল্পনা করা হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এসব সন্ত্রাসীকে কঠোর হস্তে দমন করা না গেলে দ্রুতই পরিস্থিতির অবনতি হবে, পাহাড়ে ফের অশান্তির দাবানল জ্বলে উঠবে।
জানা যায়, সম্প্রতি খাগড়াছড়ির গুইমারা ও লক্ষ্মীছড়ি এলাকায় অরাজকতার পরিপ্রেক্ষিতে এর পার্শ্ববর্তী বর্মাছড়ি এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি টিওবি (টেম্পরারি অপারেটিং বেইস) স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। উপজাতি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম বন্ধের জন্য সেনাবাহিনী এ এলাকায় সরকারি খাসজমির ওপর এই অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী টিওবি স্থাপনের পরিকল্পনা করলেও উপজাতি সশস্ত্র সংগঠনগুলো স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে- বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে বর্মাছড়ি এলাকায় সাধারণ মানুষকে দিয়ে তারা মিছিল-মিটিং করিয়েছে। আগামী ৩০ তারিখের মধ্যে ইউপিডিএফের নেতৃত্বে ক্যাম্প স্থাপনের বিরোধিতা করে ৮-১০ হাজার লোকের জনসমাবেশের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বর্মাছড়ি এলাকায় সেনাবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন এবং এর বিরোধিতা করে উপজাতীয়দের প্রতিবাদের বেশ কিছু তথ্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বলা হচ্ছে, সেনাবাহিনী আর্য কল্যাণ বনবিহারের জমি দখলে নিয়ে ক্যাম্প স্থাপন করছে। বাস্তবে সেখানে কোনো ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে না। অভিযানের সুবিধার জন্য সেখানে অস্থায়ীভাবে একটি ক্যাম্প করা হচ্ছে। আর ওই এলাকা আর্য কল্যাণ বিহারের অনেক দূরে।
জানা গেছে, ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা গত শুক্রবার স্থানীয়দের উসকানি দিয়ে মাঠে নামায়। তারা বর্মাছড়ি বাজার মাঠে সমাবেশ করে। সেখানে স্থানীয়রা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর স্লোগান দিয়ে পরিস্থিতি সংঘাতময় করার চেষ্টা করে। তাদের সঙ্গে ছিল ইউপিডিএফের বেশ কয়েকজন নেতা। তবে কর্তব্যরত চৌকশ সেনা কর্মকর্তারা তাদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
উল্লেখ্য, পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা অপপ্রচার করছে, ক্যাম্প স্থাপন পার্বত্য চুক্তির লঙ্ঘন। কিন্তু বাস্তবতা হলো এ ধরনের অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের ক্ষেত্রে চুক্তি কোনো বাধা নেই। দেশের ভূখণ্ড রক্ষা এবং জনগণের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী যে কোনো স্থানে যেতে পারে, অস্থায়ীভাবে অবস্থান করতে পারে। তা ছাড়া বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অপরাধ দমনে সিভিল প্রশাসনের সহযোগিতায় সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বাধীন দেশেরই অংশ, ফলে সেখানে সেনাবাহিনী নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবকিছুই করতে পারে।
বর্মাছড়ি স্থানটি খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলার সীমানায় অবস্থিত। এলাকাটি বেশ দুর্গম হওয়ায় উপজাতি সশস্ত্র সংগঠনগুলো এই এলাকাকে তাদের অপকর্মের দুর্গ হিসেবে ব্যবহার করছে। সম্প্রতি গুইমারা ও লক্ষ্মীছড়ি এলাকায় উপজাতি সশস্ত্র সংগঠনগুলো যে অরাজকতা করেছে তা বর্মাছড়ি এলাকা হতেই পরিচালনা করা হয়েছে। তাদের সশস্ত্র কার্যক্রম বন্ধের জন্যই সেনাবাহিনী এ এলাকার সরকারি খাস জমির ওপর একটি টিওবি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণ অভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা শুরু হয়। তার অংশ হিসেবে পাহাড়ে নৈরাজ্য শুরু করে বিচ্ছিন্নতাবাদী ইউপিডিএফের একটি অংশ।
সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে তারা এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে রাস্তায় নামে। ইউপিডিএফের সশস্ত্র গ্রুপের মদতপুষ্ট ‘জুম্ম ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে খাগড়াছড়িতে লাগাতার অবরোধের ডাক দিয়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। তাদের নির্বিচার গুলিতে খাগড়াছড়ির গুইমারায় তিন পাহাড়ি যুবক নিহত হয়। আহত হন পাহাড়ি-বাঙালিসহ অসংখ্য মানুষ। খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারায় বাড়িঘর দোকানপাটে আগুন দেওয়া হয়। তারা গায়ে পড়ে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চায়। তবে সেনাবাহিনী ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেয়। তখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পাহাড়ে ওই নৈরাজ্যের জন্য ভারতকে সরাসরি দায়ী করেন। যদিও ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর বিষয়টি অস্বীকার করে।
শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনামলে পার্বত্য চুক্তির অজুহাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ২৪১টি নিরাপত্তা ক্যাম্প তুলে নেওয়া হয়। আবার ওপারে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চালু করা হয়। প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের অস্ত্রসহ এই পাড়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দুর্গম অনেক এলাকা রয়েছে যেখানে কোনো সংঘাত-সহিংসতার খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পৌঁছাতে দুই থেকে তিন দিন সময় লেগে যায়। ফলে এখন অনেক এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সামনে নির্বাচন, এ নির্বাচন টার্গেট করে পাহাড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি বাড়ছে। সীমান্ত পথেও অস্ত্র আসছে। অবৈধ অস্ত্রের আনাগোনা রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত হবে বলে আশঙ্কা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।