প্রতিবেশী পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ব্যাপক অনুপ্রবেশের কারণে ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রজনন হারের কারণে নয়। এই মন্তব্য করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। শুক্রবার দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে একটি পরিসংখ্যান দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দাবি করেন দেশে মুসলিম জনসংখ্যা ২৪.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে হিন্দু জনসংখ্যা ৪.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। দৈনিক জাগরণ আয়োজিত ‘অনুপ্রবেশ, জনসংখ্যাগত পরিবর্তন এবং গণতন্ত্র’ শীর্ষক ‘নরেন্দ্র মোহন স্মারক বক্তৃতা’ প্রদানকালে শাহ এই মন্তব্য করেন। পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই দেশগুলোতে হিন্দু জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। এর পিছনে ধর্মান্তরী ঘটনা নয়, বরঞ্চ তাদের অনেকেই ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। অন্যদিকে, ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ জন্মহার নয়, বরং দেশটিতে মুসলিম ব্যক্তিদের ব্যাপক অনুপ্রবেশের কারণে এটা হয়েছে।’
১৯৫১ সাল থেকে ২০১১ সালের দেশের জনগণনার তথ্য তুলে ধরে শাহ বলেন, ‘দেশে মুসলিমদের জনসংখ্যা ২৪.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে হিন্দু জনসংখ্যা ৪.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
আমি আপনাদের বলতে পারি, জন্মহারের কারণে মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় নি, বরং অনুপ্রবেশের কারণে হয়েছে। যখন ভারত বিভক্ত হয়েছিল, তখন ধর্মের ভিত্তিতে উভয় দিকে পাকিস্তান (পূর্ব ও পশ্চিম) গঠিত হয়েছিল, যা পরে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে বিভক্ত হয়েছিল এবং উভয় দিক থেকে অনুপ্রবেশের ফলে আজ ভারতের জনসংখ্যায় এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৫১ থেকে ২০১১ সালের জনগণনাতে সকল ধর্মের জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে তারতম্য তা মূলত অনুপ্রবেশের কারণে হয়েছে। আমি দ্বিধাহীন কন্ঠে বলতে চাই যতক্ষণ না প্রতিটি ভারতীয় এই বিষয়টি বুঝতে পারছেন, ততক্ষণ আমরা আমাদের দেশ, সংস্কৃতি, ভাষা এবং আমাদের স্বাধীনতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবো না।’
অনুপ্রবেশের পিছনে ভোটব্যাংক একটা বড় ইস্যু বলেও দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তার অভিমত ‘গুজরাট এবং রাজস্থানেরও সীমানা রয়েছে, কিন্তু সেখানে কোনও অনুপ্রবেশ ঘটে না। যদিও কিছু রাজনৈতিক দল আছে যারা অনুপ্রবেশকারীদের দেশের জন্য হুমকি নয় বরং ভোট ব্যাংক হিসাবে দেখে।’ অনুপ্রবেশমুক্ত করতে তার দল বিজেপি ‘ডিটেক্ট, ডিলিট এবং ডিপোর্ট’ এই তিনটি নীতি গ্রহণ করেছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এর লক্ষ্য সরকার প্রথমে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করবে, দ্বিতীয় ধাপে ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম মুছে ফেলার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে এবং পরবর্তীতে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য কাজ করবে। কারণ কেবলমাত্র এই দেশের নাগরিকদেরই ভোটাধিকার দেওয়া উচিত।’
‘নাগরিকত্ব সংশোধন আইন’ (সিএএ) এবং ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ (এসআইআর) কেও সমর্থন করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সিএএ কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার কর্মসূচি নয়, বরঞ্চ এটি নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য তৈরি একটি কর্মসূচি। এই আইনে হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান বা অন্য কোনও সম্প্রদায়কে তাদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করার কোনও বিধান নেই। এর একমাত্র উদ্দেশ্য হল শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদান করা।’
এসআইআর নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিমত, এটা জাতীয় ইস্যু, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটা দেখা উচিত নয়।’ তিনি আরও বলেন ‘এসআইআর পরিচালনা করা দেশের নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। ভারতের সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে এবং এটা তখনই সম্ভব যখন ভোটারের সংজ্ঞা অনুযায়ী ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়। যখন অনুপ্রবেশকারীদের আমাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখন তারা দেশের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী হয়ে ওঠে। ফলে ভোটের উদ্দেশ্য যদি জাতির স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে, তখন গণতন্ত্র কখনই সফল হতে পারে না।’