রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন শিক্ষাবিদ, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। সর্বস্তরের জনসাধারণের শ্রদ্ধানিবেদনের জন্য গতকাল বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তাঁর লাশ রাখা হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ফুলেল শ্রদ্ধানিবেদনের মধ্য দিয়ে তাঁকে শেষবিদায় জানায় শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষ।
ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ইমেরিটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমাদ খান, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী, আলোকচিত্রী শহীদুল আলম, গবেষক ও প্রাবন্ধিক মফিদুল হক, ব্র্যাকের আসিফ সালেহ, অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম, গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জী, ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান প্রমুখ।
শ্রদ্ধানিবেদনকালে ইমেরিটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘মনজুর আমার ছাত্র ছিলেন ও পরে সহকর্মী হয়েছেন। ছাত্রজীবনেই অধ্যাপনা শুরু করেন। সেই সময় তিনি খুবই বিচক্ষণ ছিলেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে তাঁর শিক্ষার্থীরা তাঁকে ভালোবাসেন। সাহিত্যের সঙ্গে তাঁর যে সংযোগ তাও অনবদ্য।
এর জন্য তিনি একুশে পদকসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন। এগুলো সবই তাঁর প্রাপ্য ছিল।’ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি ফুলার রোডে স্যারের পাশের বাসায় থাকতাম। উনি দেখলেই মন জুড়ানো একটা হাসি দিতেন। আমার কাছে মনে হয়েছে কারও আত্মা খুব পরিষ্কার না হলে, কারও হৃদয় খুব বিশুদ্ধ না হলে এভাবে হাসা যায় না। উনার হাসিটাই ছিল উনার একটা সিগনেচারের মতো।’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘মনজুর ভাইয়ের মতন একজন ব্যক্তি, একজন শিক্ষক, একজন লেখক ও একজন বিশ্লেষক আমাদের মধ্য থেকে চলে গেছেন। উনার সঙ্গে আমার সম্পর্ক কিছুটা পেশাকেন্দ্রিক হলেও বেশিটাই ব্যক্তিগত। উনি এবং আমি উভয়েই সিলেটের মানুষ। মনজুর ভাই এমন একজন মানুষ, যাকে সবাই সম্মান করে। তাঁর জ্ঞানকে, তাঁর প্রজ্ঞাকে আমরা সবাই সম্মান করি।’
সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের বোন সাহিদা সাত্তার বলেন, ‘আমার ভাই যে কতটা জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন তা গত এক সপ্তাহে হাসপাতালে তাঁর ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি ও আজ এখানে বৃষ্টির মধ্যেও এত মানুষের সমাগমে আমরা বুঝতে পেরেছি, অভিভূত হয়েছি।’ তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস, আর্কাইভ ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগ, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ, লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক পরিবার, এশিয়াটিক সোসাইটি, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ জাসদ, বাসদ, ছায়ানট, জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট, বাংলা একাডেমি, কালি ও কলম, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সর্বস্তরের মানুষ।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁর লাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে রাখা হয়। অপরাজেয় বাংলার সামনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাজিন আজিজ চৌধুরী, ইংরেজি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, সংগীত বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধানিবেদন শেষে বেলা ১টায় মনজুরুল ইসলামের লাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নেওয়া হয়। সেখানে বাদ জোহর নামাজে জানাজা শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়। রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বিকাল ৫টায় মৃত্যুবরণ করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। এরপর তাঁর লাশ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়।