পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি রক্ষায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা তুলে ধরা এবং শান্তি চুক্তি বাতিল অথবা সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। গতকাল রাজধানীর মহাখালীর রিটায়ার্ড আর্ম ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া) ক্লাবের হেলমেট হলে আয়োজিত ‘সমস্যাসংকুল পার্বত্য চট্টগ্রাম : শান্তির অন্বেষণ শীর্ষক মুক্ত আলোচনা’ সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন রাওয়ার প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) আবদুল হক। বক্তারা বলেন, আদিবাসী, নৃগোষ্ঠী, সেটেলার, সেটেলাম বাঙালি শব্দগুলো বাদ দিতে হবে। শুধু চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের নিয়ে আলোচনা না করে পার্বত্য চট্টগ্রামের সব জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে শান্তি আলোচনা করতে হবে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মেজর জেনারেল (অব.) কামরুজ্জামান। তিনি পার্বত্য অঞ্চলের শাসন ও শাসকদের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ‘বর্তমান সময়ে এসে এখানে যে সমস্যা আছে এর সঙ্গে ভারত জড়িত।’ সিএসডি সম্প্রীতি জোট সমন্বয়ক থোয়াইং চিং মং শাক বলেন, ‘আমরা রাঙামাটিকে লিজ দিয়েছি চাকমাদের হাতে, বান্দরবানকে লিজ দিয়েছি মারমাদের হাতে আর খাগড়াছড়িকে লিজ দিয়েছি ত্রিপুরাদের হাতে। কিন্তু আমাদের বলা হয় উপজাতি। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। এই পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার স্বাদ নিতে পারিনি, জুলাই ’২৪-এর স্বাধীনতার স্বাদও নিতে পারিনি। তার একমাত্র কারণ এই তিনটি জাতির কাছে পার্বত্য চট্টগ্রাম লিজ দেওয়া আছে।’ এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চাই, আর্মির উপস্থিতি চাই না, কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম স্পেশাল প্লেস। এখানে আর্মির কারণেই সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা এখনো বজায় রয়েছে।’ রাওয়া চেয়ারম্যান কর্নেল আবদুল হক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, দেশের শত্রুদের চক্রান্ত- তারা করতেই থাকবে, ভবিষ্যতেও করবে। কিন্তু সেটা থেকে বাঁচার জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, আমাদের জাতীয় ঐক্য। এসব বিষয়ে দল-মত-বর্ণনির্বিশেষে ছবিটা নিয়ে আসেন। সবাইকে একত্রিত হতে হবে।’ আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘পাহাড়ে যারা বসবাস করছেন তাদের ধর্মীয় পরিচয় নয় বা যারা সমতল থেকে গেছে এটা বিষয় নয়। বরং নিজেদের মেলামেশা দরকার। এ ছাড়া অবশ্যই সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বাড়াতে হবে, যাতে জরুরি যে কোনো মুহূর্তে তারা সাড়া দিতে পারে।’ সভায় আরও বক্তব্য দেন মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহফুজ পারভেজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মানিষ দেওয়ান চাকমা, সাবেক মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর কাবির তালুকদার, সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইউ খান তেঈন, দৈনিক নয়া দিগন্তের সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর, যুগান্তর সম্পাদক ও কবি আবদুল হাই শিকদার, সাবেক মেজর জেনারেল আকবর ফজলে এলাহী, সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সিরাজুল ইসলাম, সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল আল ইউসুফ, সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তুষার কান্তি চাকমা, পার্বত্য নিউজের সম্পাদক মেহেদী হাসান পলাশ, বীরপ্রতীক ও সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব আহমেদ জাকারিয়া প্রমুখ।