মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, মানুষ যেন সব অপকর্ম থেকে নিজেকে রক্ষা করে। নিজেকে সংশোধন করে ইহকালে ও পরকালে সফলতা লাভ করতে পারে। তাই সফলতার পূর্ণতায় পৌঁছাতে হলে নিজেকে ও অন্যকে প্রতারণার কুফল থেকে রক্ষা করতে হবে। প্রতারণার কুফল হলো ব্যক্তিগত, সামাজিক ও আর্থিক ক্ষতি। যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বাস ভঙ্গ, সম্পর্ক নষ্ট হওয়া, সম্মানহানি এবং সমাজে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি। প্রতারণা ব্যক্তিগত লাভ বা সুবিধার জন্য করা হলেও এটি একটি ভয়ংকর অপরাধ, যা কেবল ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকেই নয়, বরং পুরো সমাজকেই নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। যারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে এবং কষ্ট দেয় তারা কখনো মুমিন হতে পারে না। মহানবী (সা.) মুসলিম শরিফের ১৬৪ নম্বর হাদিসে বলেছেন, যে কারও সঙ্গে প্রতারণা করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। আল্লাহতায়ালা প্রতারকদের মুনাফিক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন, সাধারণত প্রতারক বা ধোঁকাবাজরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধোঁকা দিয়ে থাকে। যেমন- ইবাদত, পারস্পরিক লেনদেন, কথাবার্তা, আমানত রক্ষা, ছদ্মবেশ ধারণ ইত্যাদি। কোরআনুল মাজিদের সুরা নিসার ১৪২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহকেও ধোঁকা দেয়, যখন তারা সালাতে দাঁড়ায়। তখন অলসভাবে দাঁড়ায়, তারা লোকদের দেখায় এবং আল্লাহকে কমই স্মরণ করে। এই আয়াতে বিশেষ করে মুনাফিক প্রতারকদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যারা ইবাদত পালনে অলসতা করে, অজুহাত দাঁড় করিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেয় এবং ভালো সাজার চেষ্টা করে। কিন্তু সেসব প্রতারক প্রকৃতপক্ষে অন্যদের ক্ষতির চেয়ে নিজেদেরই বেশি ক্ষতির দিকে ধাবিত করে। প্রতারিত ব্যক্তির মনে গভীর মানসিক আঘাত লাগে এবং তাদের মধ্যে অন্যদের প্রতি অবিশ্বাস তৈরি হয়।’ যেমন কোনো বিক্রেতা ভালোর কথা বলে খারাপ দিয়ে প্রতারিত করল, অথবা সঠিক পরিমাপ না করে কম দিয়ে প্রতারিত করল। কোরআন মাজিদে আল্লাহ সুরা নিসার ২৯ নম্বর আয়াতে বলেছেন, হে মুমিনরা তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেও না। অপর সুরা আরাফের ৮৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, তোমরা পরিমাণে ও ওজনে পরিপূর্ণ দাও এবং মানুষকে তাদের পণ্য কম দেবে না। প্রতারণা ও ঠকানোর মাধ্যমে যারা অন্যের সম্পদ ও অর্থ আত্মসাতে নিজেদের উদর ভর্তি করে, তারা শুধু হারাম খেয়ে থাকে। আর যারা হারাম খায় তাদের ব্যাপারে নবীজি স্পষ্টভাবে বলেছেন, হারাম খাদ্য দিয়ে প্রতিপালিত দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। সমাজে যখন প্রতারণা ছড়িয়ে পড়ে, তখন মানুষ একে অপরকে বিশ্বাস করতে পারে না, যা সামাজিক বন্ধনকে দুর্বল করে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে। প্রতারণা থেকে সৃষ্ট লোভ ও অসৎ উদ্দেশ্য অনেক সময় অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড উৎসাহিত করে। প্রতারণার মাধ্যমে অনেকেই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়, যা তাদের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতারণা হলে তা সুনাম ও অর্থ দুটোই নষ্ট করে। প্রতারণার মাধ্যমে ব্যক্তি সাময়িকভাবে লাভবান হলেও এটি তাদের নৈতিকতার পতন ঘটায়। প্রতারণার মাধ্যমে কিছু অর্জিত হলেও তার ফলাফল একেবারে শূন্য। নবীজি সাহাবিদের কাছে জানতে চাইলেন তোমাদের মধ্যে কে নিঃস্ব গরিব? সাহাবিরা বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ যার কোনো টাকা পয়সা নেই। রসুল (সা.) বললেন, না প্রকৃত গরিব ওই ব্যক্তি, যে কেয়ামতে পাহাড়সম নেকি নিয়ে উঠবে কিন্তু সে জাহান্নামে যাবে, কারণ সে দুনিয়ার কাউকে গালি দিয়েছিল, অন্যের হক নষ্ট করেছিল ও প্রতারণা করেছিল। কেয়ামতের মাঠে ওই সব লোক তার কাছে পাওনা দাবি করবে, প্রতারণা করার কারণে যে ক্ষতি হয়েছে সে ক্ষতিপূরণ দাবি করবে, বিনিময় সে নিজের সব নেকি দিতে বাধ্য হবে। নেকি শেষ হলে তার কাছে দেওয়ার মতো আর কিছু থাকবে না। তখন সে পাওনাদারদের পাপের বোঝা নিজের মাথায় নিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অতএব আমাদের মাঝে যারা এই অশোভন আচরণে অভ্যস্ত, তারা খুব দ্রুত নিজেদের সংশোধন করে ফেলি, আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু, তার কাছে সব সময় তওবার দরজা উন্মুক্ত। তওবা করে ফিরে আসা প্রকৃত মুমিনের গুণাবলি, আল্লাহতায়ালা সবাইকে সঠিকভাবে বুঝে অনুধাবন করে আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
খতিব : বাইতুন নূর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, দক্ষিণ পীরেরবাগ ওলী মার্কেট, ঢাকা