দেশের বাজারে উঠতে শুরু করেছে সাতক্ষীরার পাকা আম। প্রথম ধাপে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, শরিখাস, ক্ষীরসরায়, গোলাপখাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু আম বাজারে এসেছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলার ফিংড়ী ইউনিয়নের বিল্লাল হোসেনের বাগান থেকে আম আহরণের মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরায় আম সংগ্রহের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ। সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মনির হোসেনের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন এনডিসি প্রণয় বিশ্বাসসহ কৃষি কর্মকর্তা ও আম চাষিরা। এ দিন সকালেই জেলার বিভিন্ন স্থানে পাইকাররা আম সংগ্রহ শুরু করেন। সাতক্ষীরার আমের কদর রয়েছে বিশ্বজুড়ে। অন্য বছরের মতো এ বছরও সাতক্ষীরার আম যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হবে। তাই গুণগত মানের আম আহরণে জেলা প্রশাসন বেঁধে দিয়েছে নির্ধারিত সময়। জাত ও প্রকারভেদে নির্ধারিত সময়ে কৃষক গাছ থেকে আম ছাড়াবেন। জেলা প্রশাসক ও কৃষি অধিদপ্তরের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২০ মে হিমসাগর, ২৭ মে ল্যাংড়া ও ৩ জুন আমপ্রালি ছাড়ানোর সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে গতকাল সকালে সাতক্ষীরার বৃহৎ আমের হাট সুলতানপুরের বড় বাজারে গিয়ে দেখা যায় গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বৈশাখী, গোলাপখাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির আমে পরিপূর্ণ। মৌসুমের শুরু বলে চাহিদা ও দাম একটু বেশি। গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগের আকৃতি ও মান অনুযায়ী প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১৮০০-২২০০ টাকায়। তবে কয়েক দিনের মধ্যে আমের দাম আরও কমে আসবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রথম দিনেই অধিক পরিমাণে আম ওঠায় বাজারে দাঁড়ানোর জায়গা নেই। বাজারে প্রবেশের রাস্তাগুলোয় ব্যাপক যানজট তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ী এবং আম চাষিরা ভ্যান ও যানবাহন নিয়ে বাজারে প্রবেশ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ বাজারে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে এ বছর জেলায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন আমের উৎপাদন হয়েছে। তারা বলছেন, ঝড় বা বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চাষি ও ব্যবসায়ীরা ৬০০ কোটি টাকার বেশি আম বাজারজাত করতে পারবেন।
সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মনির হোসেন জানান, সাতক্ষীরার ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয়েছে ৬৮ থেকে ৭০ হাজার মেট্রিক টন। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৬০০ কোটি টাকা। এ বছর গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ১০০ টনের বেশি আম যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হবে। জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘প্রকৃতির উর্বর ভূমি সাতক্ষীরা। এ জেলা আম, চিংড়ি ও সুন্দরবনের জন্য বিখ্যাত। আমের পাশাপাশি এখানকার কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি হয়। সাতক্ষীরার আম কীভাবে আরও বেশি বিদেশে রপ্তানি করা যায় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর কোনো ব্যক্তি ও চাষি ওষুধমিশ্রিত আম বাজারজাত করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’