এক সময় পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত ছিল রংপুর জেলা পরিষদ চত্বর। শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই সবুজ পরিসর প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে প্রকৃতিপ্রেমীদের টানতো। শতবর্ষী নানা প্রজাতির গাছের মধ্যে ছিল হাজারো পাখির বাসা, ছিল ছায়াঘেরা পরিবেশ আর নিরবিচারে বিচরণ।
কিন্তু ২০২০ সালে জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানম জেলা পরিষদের মূল ভবনের সামনে শেখ মুজিবুরের একটি ম্যুরাল নির্মাণের লক্ষ্যে শতাধিক গাছ কেটে ফেলেন। যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, “ম্যুরালটি যাতে রাস্তা থেকে স্পষ্ট দেখা যায়”। এছাড়া বলা হয়, গাছগুলো নাকি ঝুঁকিপূর্ণ ও পোকায় আক্রান্ত ছিল।
এই বৃক্ষ নিধনের মধ্য দিয়ে হারিয়ে যায় ‘পাখির অভয়াশ্রম’ নামটি। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ভেঙে ফেলা হয় সেই ম্যুরালও। কিন্তু ফিরে আসেনি হারানো সবুজ, পাখির কোলাহল আর ছায়াঘেরা পরিবেশ।
রংপুর মহানগর সুজনের সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, “আমরা গাছ কাটা বন্ধে তখন আন্দোলন করেছিলাম। কিন্তু কেউ শোনেনি। এখন পাখি আর আসে না। জড়িতদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা উচিত।”
কবি বাদল রহমান বলেন, “এখানে বিকেলে পাখির কলতান আর মানুষের ভিড় থাকতো। এখন তা শুধু স্মৃতি। গাছ কেটে ফেলার ফলে পাখির বাসস্থান আর খাদ্যের সংকট ভয়াবহভাবে বেড়েছে।”
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও প্রকৃতিপ্রেমিক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, “স্থানীয় সরকার সংস্থার এই উদাসীনতা প্রকৃতির ওপর মারাত্মক আঘাত। এই গাছগুলো শুধু গাছ ছিল না, ছিল প্রাণীদের নিরাপদ আবাস। গাছ কাটার সময়ও আমরা আইনি ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছিলাম, এখনো জানাচ্ছি।”
জানা যায়, বৃটিশ আমলে ১৮৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত রংপুর জেলা বোর্ডের ক্যাম্পাসে গড়ে ওঠা এই গাছগুলোর বয়স ছিল একশ বছরেরও বেশি। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলেও সেই গাছগুলো অক্ষত ছিল। কিন্তু এক সিদ্ধান্তে উজাড় হয়ে যায় প্রাকৃতিক ঐতিহ্য।
তৎকালীন গাছ কাটা প্রসঙ্গে বলা হয়েছিল, সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। তবে স্থানীয়রা মনে করেন, প্রকৃতপক্ষে ম্যুরালের দৃশ্যমানতা বাড়ানোই ছিল একমাত্র উদ্দেশ্য।
এখন রংপুরবাসীর প্রাণের দাবি—পুনরায় এই জায়গাকে সবুজায়িত করা হোক, এবং যাঁরা শতবর্ষী অভয়ারণ্য ধ্বংসে ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
বিডি প্রতিদিন/আশিক