পয়লা জুন থেকে ঘরোয়া ফুটবলে দল বদল শুরু হয়েছে। যা শেষ হওয়ার কথা ১৪ আগস্ট। এক সময়ে এক মৌসুম শেষ হওয়ার পর দল বদল শুরু হতো তিন মাস বা আরও বেশ সময়ের পর। তার পরিবর্তন এসেছে। গত দুই বছর থেকে ঘরোয়া ফুটবলে পর্দা নামার এক দিন কিংবা দুই দিন পর দল বদলের কর্মসূচি চলছে। এমন নতুনত্ব আসার পরও ক্লাবগুলো বিরক্ত নয়। কারণ তারা তো প্রায় ৯০ দিন নতুন করে ঘর সাজানোর সুযোগ পাচ্ছে। কেউ শক্তিশালী বা মাঝারি মানের দল গড়ছে। কিন্তু আক্ষেপ কারোর নেই। বাফুফের সহসভাপতি থাকা অবস্থায় ইমরুল হাসান পেশাদার লিগ ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। দায়িত্ব নিয়েই ঘরোয়া আসরে নতুনত্ব আনার পরিকল্পনা আঁকছেন। এখন তো সিনিয়র সহসভাপতির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। এর পরও ঘরোয়া ফুটবলে কীভাবে প্রাণ ফেরানো যায় তা নিয়েই করছেন নতুন চিন্তাভাবনা।
পেশাদার লিগের যাত্রা ২০০৭ সালে। কতজনই তো লিগ কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। কেউ কি গতি আনার চিন্তা করেছেন? ইমরুল হাসানকেই দেখা যাচ্ছে পুরাতন রীতি ভাঙতে। দল বদলটা তার কমিটি এমন সময় শুরু করেছে যা আন্তর্জাতিক উইন্ডোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে। বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর সুবিধা হচ্ছে, বাছাই করে বিদেশি ফুটবলার আনতে পারবে। আগে অঢেল অর্থ খরচ হতো ঠিকই। কিন্তু মান যাচাই করে বিদেশি আনা যেত না। এখন সেই সুযোগটা এসেছে। ইমরুলের নেতৃত্ব দেওয়া কমিটি ইউরোপিয়ান লিগ অনুসরণ করে পেশাদার লিগের ফিকশ্চারের নতুনত্ব এনেছে। আগে ফিকশ্চার হতো চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপরা শেষ ম্যাচ খেলবে। সেই ছক এঁকেই প্রতিটি ক্লাবের খেলার তারিখ নির্ধারণ করত। এতে করে বুঝেশুনেই পাতানো খেলা খেলতে পারত। শীর্ষে থাকার সুযোগটা যেমন থাকত, তেমনি পয়েন্টের নিচের সারির দলগুলো রেলিগেশন এড়াতে পাতানোর আশ্রয় নিতে পারত। একথা ঠিক যে, এখনো সেই রোগ পুরোপুরি সারেনি। তবে সিন্ডিকেট তো প্রায় ভাঙতে পেরেছে।
আসন্ন ঘরোয়া ফুটবলে যদি শিডিউল রক্ষা করা যায়। তাহলে ৭৭ বছরের ইতিহাসে যা হয়নি তা এবারই প্রথম হবে। এক মৌসুমে পাঁচ আসর কখনো কি হয়েছে? তা এবার করতে যাচ্ছে ইমরুল হাসানের নেতৃত্ব দেওয়া পেশাদার লিগ কমিটি। চ্যালেঞ্জ কাপ, পেশাদার লিগ, ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপ ছাড়া সুপার কাপ মাঠে নামানোর ছক আঁকা হয়েছে। খসড়া শিডিউল করা হয়েছে আরও আগেই। চূড়ান্ত অনুমোদন হতে পারে সামনের যে কোনো সভায়। এক মৌসুমে এত আয়োজন মানেই নতুনভাবে ফুটবলে প্রাণ ফিরবে। প্রশ্ন হচ্ছে- লিগ কমিটি তা বাস্তবায়ন করতে পারবে কি না? কেননা, পর্যাপ্ত সময়ের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিরতা বা বিভিন্ন দুর্যোগে অনেক সময় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তা করা যায় না।
দীর্ঘদিন ধরেই তো লিগের পাশাপাশি স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপ হয়ে আসছিল। গতবার সময়ের কারণে স্বাধীনতা কাপ মাঠে নামানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু নতুন চমক ছিল চ্যালেঞ্জ কাপ। মৌসুমের শুরুতেই যা ইমরুল হাসানের উদ্যোগে মাঠে গড়িয়েছিল। তা আবার ইউরোপিয়ান ফুটবল অনুসরণ করে। ইংল্যান্ড, স্পেন, ইতালি ও ফ্রান্সে মৌসুম শুরুর আগে লিগ ও অন্য টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে আসর করে থাকে। যা গতবার বসুন্ধরা কিংস ও মোহামেডানের ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়। সব ঠিক থাকলে এবারও লিগ চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান ও ফেডারেশনকাপ বিজয়ী বসুন্ধরা কিংস শিরোপা জিততে লড়বে।
২০০৯ সালে কোটি টাকার প্রাইজমানির সুপার কাপ মাঠে গড়িয়েছিল। ব্যাপক সাড়া পড়েছিল টুর্নামেন্ট ঘিরে। অথচ মাত্র তিনবার আয়োজন করে বন্ধ। জনপ্রিয় সেই টুর্নামেন্ট ১২ বছর পর মাঠে নামানোর উদ্যোগ নিয়েছেন ইমরুল। এখন সবকিছু নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর। যদি এক মৌসুমে পাঁচ আসর শুরু হতে পারে তাহলে ফুটবলে জোয়ার আসবেই বলে দেশি ফুটবল বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন।