রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে নেপাল। তারা হিন্দুরাষ্ট্র ফেরানোর দাবিতেও সরব। দেশটিতে রাজতন্ত্র পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটেছে। এতে অন্তত দুজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কয়েক ডজন মানুষ।
রাজতন্ত্রপন্থিরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে কর্মকর্তাদের ওপর পাথর ছুড়তে শুরু করলে বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে এবং বাতাসে রাবার বুলেট ও তাজা গুলি ছুড়ে পাল্টা জবাব দেয়। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার কাঠমান্ডুতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী নিষিদ্ধ এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ বল প্রয়োগ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাতে কারফিউ জারি করা হয় বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পুলিশের মুখপাত্র দীনেশ কুমার আচার্য বলেন, নিহতের মধ্যে একজন বিক্ষোভকারী ও একজন সাংবাদিক রয়েছেন। নেপালের এভিনিউজ টিভি জানিয়েছে, তাদের একজন সাংবাদিক একটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। নেপাল পুলিশের আরেক মুখপাত্র শেখর খানাল জানান, বিক্ষোভকারীরা একটি ব্যক্তিগত বাড়ি ও একটি গাড়িতে আগুন দেয়। সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্যসহ মোট ১৭ জন আহত হয়েছে।
এ ঘটনায় তিন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। এদিন নেপালে রাজতন্ত্রবিরোধী একটি সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে তা শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়।
রাজতন্ত্র বিলুপ্তির ইতিহাস : নেপালে ২০০৮ সালে বিশেষভাবে নির্বাচিত একটি পরিষদ ২৩৯ বছরের পুরোনো রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে। এর আগে ১৯৯৬-২০০৬ সালের মধ্যে সংঘটিত মাওবাদী বিদ্রোহে ১৭ হাজার মানুষ নিহত হয়। এরপর নেপালকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, ফেডারেল প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। হিমালয়সংলগ্ন দেশটির শেষ রাজা ৭৭ বছর বয়সি জ্ঞানেন্দ্র শাহ রাজতন্ত্র বিলুপ্তির পর থেকে কাঠমান্ডুতে তাঁর ব্যক্তিগত বাসভবনে বসবাস করছেন।
পুলিশের দাবি : শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা নেপালের জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে পার্লামেন্ট ভবনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টাও চালায়। পুলিশ কর্মকর্তা কুমার নেউপানে বলেন, উচ্ছৃঙ্খল জনতা ছত্রভঙ্গ করতে আমরা আকাশে গুলি ছুড়েছি। নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা ব্যক্তিগত সম্পত্তি, হাসপাতাল, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, গণমাধ্যম ভবন ও একটি শপিং মল ভাঙচুর করেছে। কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসনের মুখপাত্র অশোক কুমার ভান্ডারি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করা হয়, যা স্থানীয় সময় রাত ১০টা পর্যন্ত বহাল থাকার কথা থাকলেও প্রয়োজনে বাড়ানো হতে পারে। রয়টার্স