মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠন করা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক পদে রদবদল আসছে। এ পদ থেকে পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মাজহারুল হককে সরিয়ে সাবেক পুলিশ সুপার আনসার উদ্দিন খান পাঠানকে আনা হচ্ছে। এরই মধ্যে মাজহারুল হককে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেলের প্রধান নির্বাহী পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই তদন্ত সংস্থার নতুন প্রধান সমন্বয়কের নিয়োগসংক্রান্ত সরকারি আদেশও জারি করা হবে। ট্রাইব্যুনাল ও তদন্ত সংস্থা সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, নতুন প্রধান সমন্বয়ক ছাড়াও আরও সাত-আটজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হতে পারে তদন্ত সংস্থায়। সংস্থার কাজে গতি আনতে এবং গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারে নতুন লোকবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে তদন্ত সংস্থায় ২৩ জন তদন্ত কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন পুনর্গঠনের পর থেকে ৪ শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে ট্রাইব্যুনালে। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে মামলা (মিস কেস) হয়েছে মাত্র ২৩টি। এসব মামলায় ১৪১ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও মাত্র ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বেশির ভাগ আসামিই পলাতক। প্রতিবেদন দাখিলে বারবার সময় নেওয়া এবং পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার করতে না পারা নিয়ে এরই মধ্যে নানা অভিযোগ আসছে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালও আসামি গ্রেপ্তার ও তদন্তের ধীরগতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। এদিকে মাত্র একটি মামলার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার কথা জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর। শিগগিরই আরও কয়েকটি প্রতিবেদন পাওয়ার আশা করেছেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তদন্ত সংস্থায় লোকবলসংকট ছিল, সেই সংকট কাটাতে আমরা নতুন নিয়োগ দেওয়ার জন্য বলেছিলাম। সেখানে সাত-আটজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক পদে পরিবর্তন আসছে। প্রধান সমন্বয়ক মো. মাজহারুল হককে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিষয়ক স্পেশাল সেলে বদলি করা হয়েছে। এখানে নতুন একজনকে আনা হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে আদেশ হবে। তদন্তের ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত বিস্তৃত ও জটিল বিষয়। এ ক্ষেত্রে পাঁচ-ছয় মাস কোনো সময়ই না। এই অপরাধ দেশজুড়ে সংঘটিত হয়েছে। ফলে মামলার সাক্ষী ও তথ্য-উপাত্ত বিপুল। আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করে তদন্ত শেষ করতে যুক্তিসংগত সময় প্রয়োজন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত একটি প্রতিবেদন আমাদের হাতে এসেছে। শিগগিরই আরও দু-একটি প্রতিবেদন আসবে। আশা করছি, এপ্রিলে প্রতিবেদনের বিষয়ে আমরা সবাইকে জানাতে পারব।