শিশু ধর্ষণের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী বৃহস্পতিবার সংশোধিত আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে। এ ছাড়া ধর্ষণসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিচারকার্য সম্পন্ন করতে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে কিছুসংখ্যক বিচারক নিয়োগের সিদ্ধান্তও নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফ করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, প্রচলিত আইন অনুযায়ী ১৬ বছর বা তার নিচে যাদের বয়স তাদের শিশু হিসেবে গণ্য করা হবে। এ ছাড়া প্রাপ্তবয়স্কদের ধর্ষণ মামলা সম্মতি ও সম্মতি ব্যতিরেকে এই দুই বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে আলাদা আলাদা অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। বিয়ের প্রলোভন বা সম্মতিতে যেসব ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে সেগুলো এক ধরনের অভিযোগ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সম্মতি ব্যতিরেকে যেসব ধর্ষণ হয়েছে সেগুলো আলাদা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। আইন উপদেষ্টা বলেন, শিশু ধর্ষণের মতো সম্মতি ব্যতিরেকে ধর্ষণ অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে তদন্ত ও বিচারের সময় কমিয়ে আনা হয়েছে।
ডিএন রিপোর্ট ছাড়াই ধর্ষণের বিচার : ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ধর্ষণের বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে মামলাজট কমাতে ডিএনএ রিপোর্ট ছাড়াই ধর্ষণের বিচারকার্য সম্পন্ন করা যাবে। আসিফ নজরুল বলেন, আদালত যদি মনে করেন, তবে মেডিকেল সার্টিফিকেট ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ডিএনএ রিপোর্ট ছাড়াই ধর্ষণ মামলার রায় দিতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, দেশে বর্তমানে একটি ল্যাবে ডিএনএ পরীক্ষা সম্পন্ন করা যায়। রিপোর্ট জটিলতা কমাতে রাজধানী ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আরও দুইটি ডিএনএ ল্যাব স্থাপন করা হবে।
সংশোধিত আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞার ব্যাপ্তি আরও বাড়ানো হচ্ছে বলে জানানো হয়। আইন উপদেষ্টা বলেন, ধষর্ণের উদ্দেশ্যে যদি কোনো বস্তু ব্যবহার করা হয় বা পায়ুপথে ধর্ষণ এবং বলাৎকার করা হয় এসব কিছুকেও ধর্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তিনি আরও বলেন, ধর্ষণের উদ্দেশ্যে যদি কোনো রকম জখম করা হয়, সেটাতেও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, মিথ্যা বা প্রতারণার মাধ্যমে কারও বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করলেও আইনে শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, বিচারের রায় হওয়ার পর যদি বিচারকের মনে হয় উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে মামলাটি হয়েছে তাহলে তিনি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। নতুন আইনে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে কারও ওপর আক্রমণ করে ব্যর্থ হওয়ার পর যদি ভুক্তভোগীর শারীরিক ক্ষতি করা হয়, তাহলে সেটাও শাস্তির আওতায় রাখা হচ্ছে বলে জানান উপদেষ্টা।
মাগুরায় শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও নির্যাতনে নিহত হওয়ার ঘটনাটি প্রচলিত আইনে দ্রুত সম্পন্ন করা হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আছিয়ার সঙ্গে সংশোধিত আইনের কোনো সম্পর্ক নেই। সভায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আমদানি বৃদ্ধি, সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং মাজার ভাঙলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে বলে জানান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।