ডেঙ্গুজ্বরের মৌসুম এগিয়ে আসতেই বাড়ছে দুশ্চিন্তা। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু রোগী। কিন্তু এডিস মশা নির্মূলে শোরগোল থাকলেও কার্যকর উদ্যোগ কম। ঢাকার দুই সিটিতে কিছু কার্যক্রম চললেও অন্য জেলা-উপজেলায় কোনো উদ্যোগ নেই। তাই এখনই ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মশা প্রজননের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা হচ্ছে ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা যদি ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে হয়, তখন যে কোনো মশার প্রজনন কমে যায়। তাপপ্রবাহে মশার প্রজনন কমলেও বৃষ্টিপাত হলেই মশার প্রজনন বাড়তে শুরু করবে।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গতকাল ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নয়জন। ডেঙ্গুর মৌসুম না থাকলেও আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। চলতি বছরে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৯৮ জন, মারা গেছে ১৩ জন। ডেঙ্গুর মৌসুম না আসতেই আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন, মারা গেছে ৫৭৫ জন। ২০২০ সালে করোনা মহামারি আঘাত হানে। এ বছর আক্রান্ত কমে আসে। এর পরে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। ২০২৩ সালে দেশে ২২ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় ও মারা যায়। ওই বছর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে ডেঙ্গু রোগী। ৬৪ জেলাতেই এডিস মশার অস্তিত্ব ও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায় এখন। দেশজুড়ে এডিস মশার বিস্তার থাকলেও জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বসে আছে হাত গুটিয়ে। মশা নিয়ন্ত্রণে ২০২১ সালে একটি জাতীয় নির্দেশিকা প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সে নির্দেশিকা নিয়ে নেই কোনো আলোচনা। ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগপ্রতিরোধে জাতীয় নির্দেশিকায় বলা হয়, ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে পৌরসভা, উপজেলা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন প্রতি মাসে মশা পরিস্থিতির ওপর প্রতিবেদন পেশ করবে। প্রতিটি পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তির সমন্বয়ে এ-সংক্রান্ত কমিটিও আছে। তবে প্রতিবেদন পাঠানো দূরের কথা, এ ধরনের একটি কমিটি আছে এটাই জানা নেই কারও। নির্দেশিকায় বলা আছে, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যরা তাঁর ওয়ার্ডের মশার বিস্তার নিয়ে প্রতি মাসে ইউপি চেয়ারম্যানকে জানাবেন। একইভাবে জেলা পর্যায়ে মশক নিয়ন্ত্রণে ২৬ সদস্যের একটি কমিটি থাকার কথা বলা আছে নির্দেশিকায়। তারা প্রতি মাসে একটি সভা করে মশার বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন দেবেন। এ কমিটির সদস্যরা হলেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন থেকে শুরু করে সরকারের স্থানীয় পর্যায়ের সব শীর্ষ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা, এনজিও প্রতিনিধি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি। কিন্তু এগুলো শুধুই কেতাবে আছে, বাস্তবে এর কোনো খবর নেই। রাজধানীতে এডিস মশার প্রকোপ থাকে সবচেয়ে বেশি। ডেঙ্গুর মৌসুমে রাজধানীর হাসপাতালগুলো ভর্তি থাকে রোগীতে। মশক নিধনের পরিকল্পনা বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)-এর প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব কি পারব না আমি জানি না। এটা বলা মুশকিল। মশার ওষুধ পরীক্ষা করতে দিয়েছি। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বসব।’