ধরপাকড়ের চলমান অভিযান স্তিমিত হয়ে পড়ায় অবৈধ অভিবাসীদের স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার অভিনব একটি পন্থা অবলম্বন করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। মঙ্গলবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারি (মন্ত্রী) ক্রিস্টি নয়েমের উদ্ধৃতি দিয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলোলিন বলেছেন, ‘অবৈধ অভিবাসীদের জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সেক্রেটারি নয়েমের সুস্পষ্ট বার্তা হচ্ছে, ‘এক্ষুনি চলে যাও। এখনই যদি যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করো, তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে আসার সুযোগ পাবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মুক্তজীবন উপভোগে সচেষ্ট হবে। মার্কিন স্বপ্নপূরণেও সক্ষম হওয়া যাবে।’ ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার বলা হয়েছে, ১৪ বছরের বেশি বয়সি সব অবৈধ অভিবাসীকে নিকটস্থ ফেডারেল অফিসে গিয়ে নাম তালিকাভুক্ত করতে হবে। সে সময় টিপসই দেবে। অন্যথায় তাদের গুরুতর অপরাধী হিসেবে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। একইসঙ্গে মোটা অঙ্কের জরিমানাও দিতে হবে। এমন ঘোষণা অবৈধ অভিবাসীদের সন্ত্রস্ত করে তুলেছে। যার প্রভাব গোটা কমিউনিটিতে পড়ছে। কারণ, সোয়া কোটির বেশি অবৈধ অভিবাসী লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, শিকাগো, বস্টন, মিয়ামি, আটলান্টা, ডেট্রয়েট, ওয়াশিংটন মেট্রো, প্যাটারসন, আটলান্টিক সিটি, বাফেলো, সিয়াটল, ওরেগন, ফিনিক্স, ডালাস, হিউস্টন ছাড়াও বহু সিটিতে বাস করছে। অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত ইউএস সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার মঈন চৌধুরী মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংশ্লিষ্টরা যেন নিজ নিজ অ্যাটর্নির পরামর্শ অনুযায়ী এ তালিকাভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন।
ফেডারেল অফিসে গিয়ে টিপসই প্রদানে ইচ্ছুকরাও যেন অ্যাটর্নি সঙ্গে নিয়ে যান। তবে যাদের বিরুদ্ধে ডিপোর্টেশনের নির্দেশ ঝুলে রয়েছে তারা তো ফেরার। ধরা পড়লেই বহিষ্কারের খড়্গ নেমে আসবে। যাদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে, অথচ অন্য কোনো প্রোগ্রামে আবেদন করেননি, কিংবা শিশুকালে মা-বাবার হাত ধরে আসার পর ১৪ বছর বয়স অতিবাহিত হয়েছে বৈধতা পাননি; তাদের এ রেজিস্ট্রেশনে যাওয়া উচিত। ইমিগ্রেশনবিষয়ক খ্যাতনামা অ্যাটর্নি জান্নাতুল রুমা বলেছেন, রেজিস্ট্রেশনের নির্দেশ পালনে ইতিবাচক-নেতিবাচক উভয় দিকই রয়েছে। তাই সংশ্লিষ্টদের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অ্যাটর্নির পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এর আগেও প্রেসিডেন্ট বুশ এমন ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। সেটির ফলাফল কেমন ছিল এখনো ভোলেননি অনেকে। এভাবে কমিউনিটিকে আতঙ্কগ্রস্ত করে অবৈধরা যাতে স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে যান তেমন ফন্দি আঁটা হয়েছে বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, স্বেচ্ছায় ফিরলে পরে যে কোনো ভিসায় প্রত্যাবর্তনের সুযোগ থাকবে। আর গ্রেপ্তার করার পর বহিষ্কার করলে ১০ বছর পর্যন্ত অন্য কোনো প্রোগ্রামে যুক্তরাষ্ট্রে আসার সুযোগ থাকবে না।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ফক্স নিউজকে ইমিগ্রেশন দপ্তরের দেখভালের দায়িত্বে থাকা সেক্রেটারি নয়েম বলেছেন, গত নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে অঙ্গীকার করেছেন তা অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালনে যা দরকার সেটি করা হচ্ছে। আমরা চাই অবৈধরা স্বেচ্ছায় চলে যাক। অন্যথায় তাদের সমুচিত শাস্তির মুখোমুখি হতেই হবে। এমন রেজিস্ট্রেশনের নির্দেশ আদৌ পালিত হবে বলে মনে করছেন না কেউই। কারণ, যারা অবৈধভাবে বাস করছেন, তারা টিপসই দিতে রাজি হবেন না। টিপসই দিলে তারা যে অভিবাসন আইনের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন সেটি উদ্ঘাটিত হবে এবং কোনোক্রমেই আইসকে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হবে না।
উল্লেখ্য, নানা কারণে অবৈধ অভিবাসীদের অবস্থান নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এটাই বড় ধরনের সুযোগ আত্মগোপনে থেকে ট্রাম্পের অভিযানের আড়ালে থাকার। এ ছাড়া সর্বত্র তল্লাশি চালিয়ে অবৈধদের ঢালাওভাবে গ্রেপ্তারের মতো জনবল কিংবা প্রযুক্তিগত সামর্থ্যও নেই হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের। এসব কারণেই রেজিস্ট্রেশনের পুরোনো একটি প্রথার ঘোষণা দিল ট্রাম্প প্রশাসন। অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী অবশ্য উল্লেখ করেছেন, আরও কিছু নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তেমন নিষেধাজ্ঞা এ রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে না আসা পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের অ্যাটর্নির পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। নাগরিক অধিকারবিষয়ক সংগঠন ‘ইউনিডোসইউএস’-এর সিনিয়র অ্যাডভাইজার ক্রিস র্যামন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, যে কোনো উপায়েই অবৈধদের গ্রেপ্তারের অভিযান জোরদারে প্রশাসনের এটি আরেকটি পদক্ষেপ। তারা চাচ্ছে স্বল্প সময়ে অধিক অবৈধকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করতে। আর এর ফলে কমিউনিটিতে আতঙ্কাবস্থা আরও বাড়িয়েছে।