পৃথিবীর কমপক্ষে ৩৫ কোটি মানুষ আরবি ভাষায় কথা বলে। ভাষাভাষীর বিচারে আরবি পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা। ইসলামপূর্ব আরব উপদ্বীপই আরবি ভাষার জন্মস্থল। জাহেলি যুগ (যে যুগে ইসলামের আগমন ঘটে) এবং ইসলামী যুগেই আরবি ভাষার চূড়ান্ত বিকাশ সাধিত হয়।
পরবর্তী সময়ে তা বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্র্যের সংযোগে একাধিক আরবি উপভাষার জন্ম হয়। আরবির কোনো কোনো উপভাষার ভেতর পার্থক্য অনারব ভাষার মতোই প্রজ্জ্বল। যেমন—কেউ যদি উত্তর আফ্রিকা ও ইরাকের দুজন আরবিভাষীর কথা শোনে তবে তার কাছে মনে হতে পারে উভয়ে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলছে।
তবে আরবি ভাষার একটি প্রমিত রূপ শিক্ষিত আরবদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
যাকে ইংরেজিতে মডার্ন স্ট্যান্ডার্ড অ্যারাবিক (এমএসএ) বা ফুসহা বলা হয়। ফুসহা বা প্রমিত আরবি কোরআনে ব্যবহূত ধ্রুপদি আরবি ভাষার নিকটবর্তী। বর্তমানে শিক্ষা, সংবাদমাধ্যম, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক বিবৃতি এবং ধর্মীয় বক্তৃতায় ফুসহা ব্যবহার করা হয়। তবে আরবি ভাষার আঞ্চলিক উপভাষা দেশগুলোর জাতিচিন্তা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে উজ্জীবিত করে।
আরবি ভাষার প্রধান পাঁচ উপভাষা
আরবি ভাষার প্রচলিত উপভাষাগুলোর মধ্যে প্রধান পাঁচ উপভাষার পরিচয় তুলে ধরা হলো—
১. মিসরীয় উপভাষা : আরবি ভাষাভাষীদের ভেতরে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ মিসরীয় উপভাষায় কথা বলে। এটা প্রায় ১০ কোটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ভাষা। মিসরের বাইরেও লাখ লাখ মানুষ এই উপভাষায় কথা বলে। মিসরীয় চলচ্চিত্র ও গণমাধ্যম মিসরীয় উপভাষা জনপ্রিয় করে তুলেছে। এই উপভাষার একটি বৈশিষ্ট্য হলো ‘জিম’ বর্ণকে ‘গাইন’-এর মতো উচ্চারণ করা।
যেমন—নাজমকে (তারকা) নিগম উচ্চারণ করা। এই উপভাষার ওপর তুর্কি, ফরাসি ও ইংরেজি ভাষার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।
২. মেসোপটেমিয়ান উপভাষা : মেসোপটেমিয়ান উপভাষায় কথা বলে ইরাক, কুয়েত, সিরিয়ার একাংশ, ইরানের আরবি ভাষীরা ও দক্ষিণ তুরস্কের আরবি ভাষীরা। এই উপভাষার ওপর প্রাচীন ও আধুনিক মেসোপটেমিয়ান ভাষাগুলোর প্রভাব আছে। যেমন—সুমেরি, আক্কাদি, ফারসি, কুর্দি ও গ্রিট। মেসোপটেমিয়ান উপভাষার প্রধান দুটি ধারা হলো জেলেট ও কেল্টু। এই উপভাষায় ‘দোয়াদ’ বর্ণকে কিছু ‘সা’ বর্ণের মতো উচ্চারণ করা হয়। একইভাবে ‘ক্বফ’ বর্ণকে ‘গাইন’ বর্ণের মতো উচ্চারণ করা হয়।
৩. শামি উপভাষা : ইংরেজিতে শামি উপভাষাকে লেভানটাইন বলা হয়। শামি উপভাষায় তিন কোটি ৮০ লাখ মানুষ কথা বলে। যাদের বেশির ভাগ সিরিয়া, লেবানন, জর্দান, ফিলিস্তিন ও তুর্কি সাইপ্রাসে বসবাস করে। শামি উপভাষা প্রমিত আরবির (এমএসএ) খুবই নিকটবর্তী। এই উপভাষায় ‘সা’ বর্ণকে ‘সিন’ বর্ণের মতো, ‘ক্বফ’ বর্ণকে ‘গাইন’ বর্ণের মতো এবং ‘কাফ’ বর্ণকে ‘সোয়াদ’ বর্ণের মতো উচ্চারণ করা হয়। শামি উপভাষার ওপর তুর্কি ভাষার বিশেষ প্রভাব রয়েছে। ইংরেজি ও ফরাসি ভাষারও সামান্য প্রভাব আছে।
৪. মাগরিবি : উত্তর আফ্রিকা তথা মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া, লিবিয়া, পশ্চিম সাহারা ও মৌরিতানিয়া এবং পশ্চিম মিসরের লোকেরা এই উপভাষায় কথা বলে। স্থানীয়রা মাগরিবি আরবিকে দারিজা বলে। যার অর্থ নিত্যদিনের ভাষা। অভিযোগ আছে, মাগরিবি উপভাষা বোঝা তুলনামূলক কঠিন। এই উপভাষার ওপর ফরাসি, স্প্যানিশ, তুর্কি ও ইতালিয়ান ভাষার প্রভাব আছে। মাগরিবি উপভাষার বৈশিষ্ট্য হলো স্বরবর্ণ বিলোপ করা। যেমন—প্রমিত আরবি বাক্য ‘মিন আইনা আনতা’-এর মাগরিবি উচ্চারণ হলো ‘মানিনতা’। মিন আইনা আনতা অর্থ আপনি কোথা থেকে এসেছেন।
৫. খালিজি উপভাষা : আরবি খালিজি শব্দের অর্থ উপসাগরীয়। এই উপভাষায় কমপক্ষে ৭০ লাখ মানুষ কথা বলে। সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ ইরাক ও উত্তর ওমানের অধিবাসীরা খালিজি উপভাষায় কথা বলে। তবে প্রত্যেক দেশের খালিজি উপভাষার ব্যবহার ও উচ্চারণে সামান্য ব্যবধান আছে। এই উপভাষার বৈশিষ্ট্য হলো ‘ক্বফ’ বর্ণকে ‘গাইন’ বর্ণের মতো উচ্চারণ করা এবং ‘কাফ’ বর্ণকে ‘সোয়াদ’ বর্ণের মতো উচ্চারণ করা। খালিজি উপভাষার ওপর ফারসি ও তুর্কি ভাষার দৃশ্যমান প্রভাব আছে। মিডল ইস্ট আই অবলম্বনে
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন