উত্তর জনপদের প্রবেশদ্বার বলে খ্যাত যমুনাপারের ঐতিহ্যবাহী সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুর থানাধীন প্রত্যন্ত খুকনী অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইলমে নববীর এক সুপ্রতিষ্ঠিত বাসন্তী কানন, জামিয়া হুসাইনিয়া মাদিনাতুল উলুম হাফিজিয়া মাদরাসা। সবুজ-শ্যামল পরিবেশে গড়ে ওঠা এই সুরম্য অট্টালিকা আর মনোরম প্রাঙ্গণ দীর্ঘকাল ধরে কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক দ্বিনি শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে।
প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস
১৯৫৯ সালে (১৩৭৯ হি.) জামিয়ার পথচলা শুরু হয় খুকনী গ্রামের মণ্ডলপাড়া মসজিদসংলগ্ন একটি ফোরকানিয়া মক্তব হিসেবে। প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ হাফেজ আব্দুল হাকীম (রহ.) তাঁর পিতা হাজি হায়াতুল্লাহ (রহ.) ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় এই দ্বিনি প্রতিষ্ঠানটির গোড়াপত্তন করেন।
পরে এটি একটি হিফজখানায় রূপান্তরিত হয় এবং দ্রুতই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাফেজে কোরআন হতে শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করে।
১৯৮১ সালে বিশিষ্ট দানবীর আলহাজ ইবাদুর রহমান সাহেবের আহ্বানে তাঁর ওয়াক্ফকৃত জমিতে নতুন ভবনের নির্মাণ শুরু হয়। তখন থেকেই এটি ‘মাদিনাতুল উলুম হাফিজিয়া মাদরাসা’ নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত এই ভবনে কোরআনের খেদমত সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হয়।
পরবর্তী সময়ে আলহাজ হাফেজ আব্দুল হাকীম (রহ.), মুফাসসিরে কোরআন মাওলানা মুফতি নূরুল হক (রহ.), মাওলানা শামছুল হক (রহ.), মাওলানা মতিউর রহমান (দা.বা.)সহ অন্যান্য আলেম ও স্থানীয় বিশিষ্টজনের আন্তরিক সহযোগিতায় ১৯৮৮ সালে কিতাব বিভাগ (কাফিয়া/নবম শ্রেণি পর্যন্ত) চালু হয়।
তখন হিফজখানাটি পূর্ণাঙ্গ জামিয়ায় পরিণত হয়। পরবর্তী সময়ে এটি স্নাতক পর্যায়ের মিশকাত শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয় এবং ২০০৮ সালে খোলা হয় দাওরায়ে হাদিস (স্নাতকোত্তর) বিভাগ।
বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে প্রায় তিন হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়ন করছে।
দ্বিনের ইলম সংরক্ষণ ও প্রচারে এক দুর্গতুল্য এই প্রতিষ্ঠান বিগত ছয় দশক ধরে দেশের শীর্ষস্থানীয় কওমি মাদরাসা হিসেবে নিজস্ব অবস্থান ধরে রেখেছে।
পাঠ্যক্রম ও শিক্ষা কার্যক্রম
জামিয়ায় মক্তব থেকে শুরু করে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে। পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত আছে কোরআন, হাদিস, ফিকহ, উসুলে ফিকহ, আকাইদ, আরবি, ফারসি ও উর্দু সাহিত্য, বাংলা, ইংরেজি, অংক, সমাজবিজ্ঞান, দর্শনসহ একান্ত প্রয়োজনীয় সব বিষয়।
বোর্ড সাফল্য ও সামাজিক অবদান
জামিয়া নিয়মিত জাতীয় ও আঞ্চলিক বোর্ড পরীক্ষায় ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করে থাকে। ছাত্রদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও পরিচালনা করা হয়।
একই সঙ্গে জামিয়া সমাজে দাওয়াতি ও সেবামূলক কার্যক্রমেও সম্পৃক্ত।
পরিশেষে ইলমে ওহির দীপ্ত শিখা প্রজ্বলিত রেখে জামিয়া হুসাইনিয়া মাদিনাতুল উলুম হাফিজিয়া মাদরাসা একদিকে যেমন শিক্ষায় দীপ্ত, তেমনি নৈতিকতা ও খেদমতের অনন্য এক দ্বিনি দুর্গ। প্রায় সাত দশকের এ দীপ্ত যাত্রা আগামী দিনেও যেন দ্বিনের আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে যায়, এই কামনা সবার।