কয়েক বছর আগেও শুধু শীত মৌসুমে পর্যটকরা কক্সবাজার আসতেন। আর তাদের বিচরণ থাকত কক্সবাজার শহরের কলাতলী বিচ থেকে লাবণী বা ডায়াবেটিক পয়েন্ট পর্যন্ত। অন্যসময় সুনসান নীরবতা বিরাজ করত সমুদ্রসৈকত-হোটেল-মোটেল জোনে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলে গেছে অনেক কিছু। এখন সারা বছর কমবেশি পর্যটক থাকে কক্সবাজারে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বা অফ সিজনে হোটেল-মোটেলে মূল্য হ্রাসের কারণে অনেকে ওই সময়ে কক্সবাজারমুখী হন। তবে পর্যটনে এই ইতিবাচক প্রভাবের মধ্যেই শঙ্কা জাগিয়েছে দুর্ঘটনা। বর্র্ষা মৌসুমে সাগরে ‘ভাঙন’ ও ‘গুপ্তখাল’ সৃষ্টি হয়। যা পর্যটকদের জন্যে যথেষ্ট ঝুঁকির সৃষ্টি করেছে। ফলে সমুদ্রসৈকতে নামলেই বাড়ছে দুর্ঘটনা। শুধু তাই নয়, কক্সবাজার শহরের অদূরে মেরিন ড্রাইভের পাশে অনেকে সমুদ্রে নামছে কিন্তু যেখানে নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা, নেই লাইফগার্ড বা প্রশাসনের কোনো তৎপরতা। অতি সম্প্রতি সাগরে ডুবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রের মৃত্যু ও একজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। তারা শহরের অদূরে নির্জনপেচারদ্বীপ সৈকতে নেমে সাগরে তলিয়ে যান। এ নিয়ে এক মাসে সাগরে ডুবে পর্যটকসহ আটজনের মৃত্যু হয়েছে। লাইফগার্ড সংস্থা জানিয়েছে, গত ১০ বছরে সমুদ্রে গোসলে নেমে অন্তত মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের। আর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে হাজারেরও অধিক। বলতে গেলে কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটারের মধ্যে ১১৭ কিলোমিটারই পর্যটকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মাত্র ৩ কিলোমিটার সৈকতে লাইফ গার্ড থাকলেও, তাদের সংখ্যাও হাতেগোনা। এর ফলে কক্সবাজারে সাগরে ডুবে পর্যটক মৃত্যুর ঘটনা কমছে না, বরং দিনদিন বেড়েই চলেছে।
কক্সবাজার দমকল বাহিনীর উপসহকারী পরিচালক মো. তানহারুল ইসলাম বলেন, ‘সাগরে যদি কেউ ডুবে যায়, তার কিছু সময় পর বা জোয়ারের সময় ভেসে আসে। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। সাগরে তল্লাশি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ডুবুরি দল নেই।’
কক্সবাজারের ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘সাগর উত্তাল থাকলে নামা যাবে না। পর্যটকদের অসতর্কতার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটছে।’ সি সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ইনানী, পাটুয়ারটেক থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে দক্ষ লাইফ গার্ড কর্মী থাকা প্রয়োজন। যাতে প্রয়োজনে দ্রুত উদ্ধার করা যায় এবং পর্যটকদের সতর্ক করা যায়। এতে তাদের সমুদ্রস্নানের নিরাপত্তা বাড়বে।’ কক্সবাজার ট্যুরিস্ট ক্লাব ও টুয়াকের সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, পর্যটকের ঢল থাকলেও নিরাপদ গোসলের জন্য নেই কোনো পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা। সরকারি আয় বাড়লেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণে আগ্রহ নেই কারও।