ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধে মিসরে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বসেছে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা। এতে নিজেদের প্রধান কিছু শর্ত জানিয়েছে হামাস। গতকাল সংগঠনটির মুখপাত্র ফাওজি বারহোম বলেছেন, মিসরে তাদের প্রতিনিধিরা ‘সব বাধা অতিক্রম’ করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেছেন, যুদ্ধবিরতির জন্য নিজেদের প্রধান শর্ত তারা জানিয়ে দিয়েছেন। সেগুলো হলো- একটি স্থায়ী এবং পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হবে। ইসরায়েলি সেনাদের গাজার সব জায়গা থেকে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। কোনো ধরনের বাধা ছাড়া গাজায় ত্রাণ পৌঁছাতে দিতে হবে। বাস্তুচ্যুত সাধারণ গাজাবাসীকে তাদের নিজ গৃহে ফিরে যেতে দিতে হবে। গাজা পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে হবে। যেটির তত্ত্বাবধান করবে একটি ফিলিস্তিনি জাতীয় প্রশাসন।
আর বন্দি বিনিময়ের একটি ন্যায্য চুক্তি করতে হবে। ফাওজি বারহোম অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ‘আটকানো ও ব্যর্থ’ করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। যেমনটা ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ তিনি আগে করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘বর্বর সামরিক হামলা, গাজার মানুষকে নির্মূলের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সীমাহীন সমর্থন সত্ত্বেও ইসরায়েল গাজায় জয়ের ভুয়া ভাবমূর্তি তৈরি করতে পারেনি, পারবেও না।’
জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বান : গাজা যুদ্ধের দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে এক জরুরি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। সোমবার তিনি এই আহ্বান জানান। এতে তিনি গাজা, ইসরায়েল এবং সমগ্র অঞ্চলে অবিলম্বে সব ধরনের শত্রুতা বন্ধের আহ্বান জানান। বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে বলেন, এমন কোনো পদক্ষেপ নেবেন না যাতে সাধারণ মানুষকে নিজেদের জীবন ও ভবিষ্যৎ দিয়ে মূল্য দিতে হয়। হামাস ও অন্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে গুতেরেস একই সঙ্গে গাজায় এখনো আটক সব জিম্মিকে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, সব পক্ষের জন্যই এই কষ্টের অবসান ঘটান। এটি এমন এক মানবিক বিপর্যয় যার মাত্রা কল্পনাকেও হার মানায়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। তারপর থেকে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৭ হাজার ১৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও এক লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৯ ফিলিস্তিনি। হতাহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। জাতিসংঘের মতে, এই সংখ্যা বাস্তবের তুলনায় কম।
কারণ হাজার হাজার লাশ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকতে পারে। গুতেরেস বলেন, সেই অন্ধকার দিনের ভয়াবহতা আমাদের সবার স্মৃতিতে চিরকাল অঙ্কিত থাকবে। দুই বছর পরও জিম্মিরা এখনো অমানবিক অবস্থায় বন্দি। আমি জিম্মিদের পরিবার ও বেঁচে ফেরা ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তাদের অসহনীয় যন্ত্রণা অবর্ণনীয়। তিনি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আহ্বান জানান জিম্মিদের অবিলম্বে ও নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিন। স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও একটি বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করুন, যাতে আর কোনো রক্তপাত না ঘটে। গুতেরেস বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শান্তি প্রস্তাব এই মর্মান্তিক সংঘাতের অবসানের একটি সুযোগ, যা কাজে লাগাতে হবে। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের শাসন সব সময় সম্মানিত হতে হবে এবং জাতিসংঘ শান্তি প্রচেষ্টায় তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে।
-আলজাজিরা ও আরব নিউজ