সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের পতনের পর প্রথম সংসদ নির্বাচনের ফল প্রকাশ করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। নতুন সংসদে (পিপলস অ্যাসেম্বলি) নির্বাচিত বেশিরভাগ সদস্যই সুন্নি মুসলমান ও পুরুষ।
নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র নাওয়ার নাজমেহ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, মোট ১১৯ জন নির্বাচিত সদস্যের মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশ নারী এবং দুইজন খ্রিষ্টান রয়েছেন। এতে প্রতিনিধিত্বের ভারসাম্য ও অন্তর্ভুক্তি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
নাজমেহ বলেন, নারীদের সংখ্যা সিরীয় সমাজে তাদের অবস্থান ও ভূমিকার তুলনায় যথেষ্ট নয়। তিনি আরও বলেন, খ্রিষ্টানদের প্রতিনিধিত্বও খুবই কম।
এই নির্বাচনকে দেশটির ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভোটে অংশ নিতে দেওয়া হয়েছে মূলত প্রভাবশালী ও ঘনিষ্ঠ মহলের প্রার্থীদের। ফলে প্রকৃত গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের পথ এখনো দূর বলে মনে করছেন সমালোচকরা।
এবারের নির্বাচন হয়েছে পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সঠিক জনসংখ্যা নির্ধারণ কঠিন হওয়ায় সরকার সরাসরি ভোট পদ্ধতি গ্রহণ করেনি। প্রায় ৬,০০০ নির্বাচক সদস্য আঞ্চলিক ইলেক্টোর্যাল কলেজের মাধ্যমে পূর্বনির্ধারিত প্রার্থীদের মধ্য থেকে নতুন সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য নির্বাচিত করেছেন। বাকি এক-তৃতীয়াংশ সদস্য প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা নিয়োগ দেবেন।
নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক কারণে সরকার কুর্দি অধ্যুষিত উত্তরাঞ্চল ও দ্রুজদের নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণাঞ্চল সোয়্যাইদা প্রদেশে ভোট স্থগিত করেছে। এতে সংসদের ২১টি আসন শূন্য রয়েছে। নাজমেহ জানান, সরকার পরে পরিপূরক নির্বাচন আয়োজন করে এই আসনগুলো পূরণ করতে চায়।
আল-জাজিরার দামেস্ক প্রতিনিধি ওসামা বিন জাভেদ জানিয়েছেন, কুর্দি ও দ্রুজ জনগোষ্ঠী নির্বাচনে নিজেদের অংশগ্রহণ না থাকার অভিযোগ তুলেছে। তবে বড় শহরগুলো—দামেস্ক, আলেপ্পো ও হামা—এর অনেক বাসিন্দা এটিকে ‘প্রকৃত নির্বাচনের প্রথম অভিজ্ঞতা’ হিসেবে দেখছেন।
বর্তমানে সিরিয়ার প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ সুন্নি মুসলমান। পূর্বতন আসাদ সরকার ছিল সংখ্যালঘু আলাওয়াইত সম্প্রদায়ের।
মধ্যাঞ্চলীয় হোমস শহর থেকে নির্বাচিত সদস্য নুর আল-জানদালি বলেন, নতুন সংসদের সামনে বড় দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের এমন একটি রাষ্ট্র গড়তে হবে যেখানে থাকবে স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার ও ন্যায়বিচার। তিনি আরও বলেন, নীতিনির্ধারণে নারীদের সক্রিয় ভূমিকা থাকা জরুরি।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল