ভারত মহাসাগরের দ্বীপদেশ মাদাগাস্কারে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ তৃতীয় সপ্তাহে পড়ার পর আন্দোলনকারীরা এখন প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার পদত্যাগ দাবি করছেন। গতকাল দেশটির একাধিক শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। রাস্তায় তরুণ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। রাজধানী আনতানানারিভোতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ছুড়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদক জানিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী; পানির ঘাটতি ও লোডশেডিংয়ের কারণে গত মাসে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভ শিক্ষার্থীরাই সরকারবিরোধী বড় আন্দোলনে পরিণত করেন। কেনিয়া ও নেপালে হওয়া ‘জেন জি’ বিক্ষোভ থেকে অনুপ্রাণিত এ বিক্ষোভ ভারত মহাসাগরের দ্বীপদেশটিকে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় অস্থিরতায় ফেলেছে। আন্দোলনকারীরা খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ দেশটির চরম দারিদ্র্য ও ব্যাপক দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। দেশটির একাধিক টিভি চ্যানেল পুলিশের সঙ্গে দক্ষিণের শহর টোলিয়ারা এবং উত্তরের শহর ডিয়েগো সুয়ারেজে বিক্ষোভকারীদের সংঘাতের খবর ও ছবি দিয়েছে। খনিজসম্পদ ছাড়াও মাদাগাস্কারের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য এবং বিপুল কৃষিজমি আছে। এর পরও দেশটি বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ। ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে শুরু করে ২০২০-এর মধ্যেই দেশটির জনসাধারণের গড় আয় ৪৫% কমেছে। সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে দিনকয়েক আগেই রাজোয়েলিনা তার মন্ত্রিসভাকে বরখাস্ত করেছিলেন।
কিন্তু বিক্ষোভকারীদের সিংহভাগই এখন ৫১ বছর বয়সি প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চাইছেন। বিক্ষোভের শুরুর কয়েক দিনেই অন্তত ২২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছিল জাতিসংঘ। দেশটির সরকার অবশ্য এ সংখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছে। শুক্রবার এক ভাষণে রাজোয়েলিনা তার পদত্যাগের দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, তিনি বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ শুনতে প্রস্তুত। তার দপ্তরের এক মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, বিক্ষোভ এখন রাজনৈতিক ক্রীড়নকদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে যারা ‘দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়’। আরেক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বলেছে, শনিবার রাজোয়েলিনা বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তবে কারা সে বৈঠকে ছিল এবং সেখানে কী কী আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে বিবৃতিতে বিস্তারিত বলা হয়নি। আন্দোলনকারী একাধিক গোষ্ঠী আলাদা বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রতিবাদ কর্মসূচিগুলো অবাধে চলতে দেওয়া এবং আটক বিক্ষোভকারীদের মুক্তির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের আশ্বাস না পাওয়ায় তারা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে রাজি হয়নি। - রয়টার্স