ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলের হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে। গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে আরও ১১৩টি লাশ আনা হয়। এতে করে নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ৩৪ জনে পৌঁছেছে। একই সময় আহত অবস্থায় ৬৩৭ জনকে হাসপাতালে আনা হয়। এতে সবমিলিয়ে আহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৭০ জনে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় হামলা শুরু করে দখলদাররা। এতে সেখানে প্রতিদিনই শত শত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ইসরায়েলের হামলায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে আশঙ্কা করা হয়। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফায় ১০ হাজার মানুষ থাকতে পারেন। যার অর্থ ইসরায়েলিরা এখন পর্যন্ত গাজায় যত মানুষকে হত্যা করেছে সেগুলো দিয়ে বুর্জ খলিফার মতো ছয়টি ভবন পূর্ণ করা যেত। এ ছাড়া নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার হওয়ার অর্থ গাজার প্রতি ৩৬ জন মানুষের একজন ইসরায়েলের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। দখলদারদের অব্যাহত হামলার কারণে গাজায় অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন। যাদের এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ সংখ্যাটি ২০ হাজারের বেশি হবে বলে আশঙ্কা করা হয়।
যুদ্ধের মধ্যেই জন্ম, অনাহারে মৃত্যু : গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল হাসপাতালে জুলাইয়ের ২৫ তারিখ মাত্র নয় মাস বয়সী ইয়ারার নিঃশব্দ প্রস্থান ঘটে। না, কোনো বোমা বা গুলিতে নয়, ইয়ারা মারা যায় ক্ষুধায়। তার মা ফিসফিস করে বলেন, ও যুদ্ধের মাঝে জন্মেছিল, যুদ্ধেই মারা গেল। কিন্তু ওর মৃত্যু হলো ক্ষুধায়। ইয়ারা ছিল চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। তার মা নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি। সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় থেকেই অপুষ্টিতে ভুগছিলেন। যুদ্ধের ভয়াবহতায় ভিটেমাটি হারিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছিলেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে বুকের দুধ শুকিয়ে গেছে, কেনার মতো দুধ নেই। যেটুকু খাবার মেলে, সেটুকু যায় বড় ছেলেমেয়েদের মুখে। ইয়ারার মা বলেন, ওকে খাওয়াতে পারিনি, কারণ আমি নিজেই খেতে পারিনি। গাজার স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, এ অনাহার কেবল দুর্ঘটনা নয় এটি পরিকল্পিত। তারা বলছে, গোটা গাজার জনগোষ্ঠী এখন অপুষ্টিতে ভুগছে, যার মধ্যে ১১ লাখ শিশু রয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিন গড়পড়তা মাত্র ৭০-৮০টি সাহায্যবাহী ট্রাক ঢুকছে গাজায়, যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। তার ওপর এ সাহায্যও হামলার শিকার হচ্ছে, লুট হচ্ছে, অথবা ইসরায়েলি নজরদারির কারণে পৌঁছাতেই পারছে না। ইসরায়েলি বাহিনী এমনকি খাবারের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষদের ওপরও হামলা চালাচ্ছে, অভিযোগ গাজার মিডিয়া অফিসের। ‘এটি একটি ইঞ্জিনিয়ারড ফ্যামিন,’ বিবৃতিতে বলা হয়। ‘তারা গাজার সমাজকে ভিতর থেকে ভেঙে দেওয়ার জন্য ক্ষুধা তৈরি করছে।’ দেইর আল বালাহর আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের পাঁচ মাস বয়সী নূরহান আয়াদ আর কাঁদতেও পারে না। -আলজাজিরা
তার কণ্ঠস্বর ক্ষীণ নিঃশ্বাসে রূপ নিয়েছে। তার মা মোনা আবু মারুফ বলেন, আমার দুধ শুকিয়ে গেছে। ও বেঁচে আছে শুধু স্যালাইনের ওপর। আমি কিছুই দিতে পারি না। ইসরায়েলের হামলায় হাজার হাজার পুরুষ মারা গেছেন খাবারের খোঁজে বেরিয়ে। মোহাম্মদ মেহান্না তেমন একজন। স্ত্রীকে বলে গিয়েছিলেন, আমাদের কিছু নেই, আমাকে যেতেই হবে। কিন্তু ফিরে আসেননি, এসেছেন খণ্ডবিখণ্ড দেহ হয়ে।