সৌরজগতের বহুদূরের অজানা অঞ্চলে এক অদৃশ্য গ্রহের অস্তিত্বের ইঙ্গিত পেয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। ধারণা করা হচ্ছে, এই গ্রহটির নাম হতে পারে ‘প্ল্যানেট ওয়াই’ (Planet Y)—একটি কাল্পনিক গ্রহ। এটাকে সরাসরি দেখা না গেলেও তার উপস্থিতির প্রমাণ মিলছে সৌরজগতের প্রান্তে থাকা কয়েক ডজন বস্তুর অস্বাভাবিক গতিপথ থেকে।
ব্রিটিশ বৈজ্ঞানিক সাময়িকী মন্থলি নোটিসেস অব দ্য রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি–তে প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, নেপচুনের পরের অঞ্চল কুইপার বেল্টে (বরফময় ছোট গ্রহ, ধূমকেতু ও মহাজাগতিক বস্তুর বিশাল বলয়) প্রায় ৫০টি দূরবর্তী বস্তুর কক্ষপথে অস্বাভাবিক হেলে পড়া বা ঝোঁক লক্ষ্য করা গেছে।
এই ঝোঁকই ইঙ্গিত দিচ্ছে সেখানে হয়তো এক অজানা গ্রহ ঘুরছে। গবেষণার প্রধান লেখক ও প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আমির সিরাজ বলেন, এটি এখনো কোনো গ্রহের সরাসরি আবিষ্কার নয়।
তবে এই অস্বাভাবিক গতিপথের সবচেয়ে যৌক্তিক ব্যাখ্যা হলো একটি অদেখা গ্রহ, যা পৃথিবীর চেয়ে ছোট কিন্তু বুধের চেয়ে বড় হতে পারে। সিরাজের দল জানান, সূর্য থেকে পৃথিবীর প্রায় ৮০ গুণ দূরত্বের পর মহাজাগতিক বস্তুগুলোর কক্ষপথে প্রায় ১৫ ডিগ্রি কোণে হেলে পড়া দেখা গেছে। প্রচলিত গ্রহগঠনের নিয়ম দিয়ে এ ঝোঁক ব্যাখ্যা করা যায় না। তাই তারা মনে করছেন, কোনো অজানা গ্রহের মহাকর্ষীয় প্রভাবই এর কারণ হতে পারে।
তাদের হিসাব অনুযায়ী, এই সম্ভাব্য গ্রহটি সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্বের ১০০ থেকে ২০০ গুণ দূরে অবস্থান করছে। এর ভর হতে পারে বুধ ও পৃথিবীর মাঝামাঝি এবং এটি সূর্যের চারপাশে প্রায় ১০ ডিগ্রি হেলে থাকা কক্ষপথে ঘুরছে।
তবে বিজ্ঞানীরা এখনো একে নিশ্চিত আবিষ্কার বলতে রাজি নন। সিরাজের মতে, এখন পর্যন্ত আমাদের প্রমাণের নির্ভরযোগ্যতা প্রায় ৯৬ থেকে ৯৮ শতাংশ। এটি যথেষ্ট শক্তিশালী, তবে নিশ্চিত নয়।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই চিলিতে শুরু হতে যাচ্ছে ভেরা সি. রুবিন অবজারভেটরির নতুন জরিপ। এটাকে মহাকাশ পর্যবেক্ষণে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। এই টেলিস্কোপটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করে প্রতি তিন দিনে পুরো আকাশের ছবি তুলবে। গবেষকেরা আশাবাদী, এই পর্যবেক্ষণই হয়তো প্রথমবারের মতো প্ল্যানেট ওয়াই-এর অস্তিত্বের নিশ্চিত প্রমাণ এনে দেবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল