বেইজিংয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও চীনের মধ্যে যে শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে। তাতে বিশ্বজুড়ে সাম্প্রতিক বাণিজ্য সংঘাত থেকে শুরু করে ইউক্রেন যুদ্ধ পর্যন্ত নানান বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। গতকাল এমন এক সময়ে এ সম্মেলন শুরু হলো, যখন দুই পক্ষ বিশ্বরাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে দুই মেরুতে অবস্থান করছে এবং বাণিজ্যসহ নানান বিষয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা নিয়েছে, বলছে বিবিসি। এ শীর্ষ সম্মেলন শুরুতে ব্রাসেলসে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সেখানে যেতে রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত স্থান বদলে যায়। জিনপিংয়ের ব্রাসেলস যেতে আপত্তি, বিশ্ববাণিজ্য ও রাজনীতি নিয়ে সম্মেলন হয় কি না, তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন জেগেছিল। শেষ পর্যন্ত আশঙ্কা কেটে যায়। দিনকয়েক আগে চীন জানায়, শি ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন ও ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তার সঙ্গে বেইজিংয়ে দেখা করবেন। বছরের শুরুতে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর নতুন করে শুল্ক নিয়ে হুমকিধমকি দেওয়া শুরু করলে চীন ও ইইউর মধ্যে সম্পর্ক ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন কমার বদলে আরও বেড়েছে।
এ শীর্ষ সম্মেলন ইইউ ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক ‘অগ্রসর ও পুনঃসমন্বয়’ করার একটি সুযোগ, বেইজিংয়ে পৌঁছানোর পরপরই এক্সে দেওয়া পোস্টে এমনটাই লিখেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন। তিনি বলেন, ‘পারস্পরিক লাভজনক সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করি। এবং এটি আমাদের পরবর্তী ৫০ বছরের সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণ করতে পারে।’ সম্মেলনের আগে দুই পক্ষের কর্মকর্তাদের কণ্ঠে এমন আশাবাদই শোনা গেছে। ইইউ কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা খোলামেলা আলোচনার জন্য প্রস্তুত। আর চীনা কর্মকর্তারা একে দেখছেন ‘বৃহত্তর সহযোগিতার’ সুযোগ হিসেবে। মঙ্গলবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন এমন এক সংবেদনশীল মোড়ে, যেখানে অতীতের অর্জনের ওপর ভিত্তি করে নতুন অধ্যায় শুরুর সুযোগ রয়েছে। ইইউর ২৭টি দেশ চীনের মতোই নানান চাপে আছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র তাদের রপ্তানি পণ্যে সম্পূরক শুল্ক আরোপের পর এ চাপ অনেক গুণ বেড়েছে। এর পরও বেইজিংয়ের এ সম্মেলন থেকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির আশা করছে না ব্রাসেলস। তার মধ্যেই কেউ কেউ দুই পক্ষের মধ্যে যৌথ স্বার্থগত জায়গা খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা চলতি মাসের শুরুর দিকে বেইজিং-চীন সম্পর্ককে ‘এ শতাব্দীর বাকি সময়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাববিস্তারকারী সম্পর্কগুলোর একটি’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে যেসব বিষয়ে অচলাবস্থা রয়েছে সেগুলোয় অগ্রগতি অর্জন জরুরি।’