জীবন ধারণের জন্য ন্যূনতম খাবারটুকুও পাচ্ছেন না ফিলিস্তিনের গাজাবাসী। খুব কম পরিমাণে ত্রাণ ঢুকছে সেখানে। যা সবার কাছে পৌঁছাচ্ছে না।
বোমারু বিমানের হামলা বন্ধ হয়নি। প্রতিদিন গাজাজুড়ে কোথাও না কোথাও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। হামলায় এখনো আহত হচ্ছেন, নিহত হচ্ছেন বহু মানুষ। তারই মধ্যে মিলছে না খাবার। কারণ, খুব কম পরিমাণে ত্রাণের ট্রাক ঢুকতে দিচ্ছে ইসরায়েল। যেটুকু খাবার ঢুকছে, তা গাজাবাসীর জন্য যথেষ্ট নয়। রাইদ আল-আথামনা নামে গাজার এক বাসিন্দা জানান, ‘সারা দিন একটি কথা ভাবতে ভাবতেই কেটে যায়, আজ কী খাব, কী খাওয়াব পরিবারকে?’
এক সময় বিদেশি সাংবাদিকদের জন্য গাজায় গাড়ি চালাতেন তিনি। ইসরায়েল বিদেশি সাংবাদিকদের আর গাজায় ঢুকতে দিচ্ছে না, ফলে দীর্ঘদিন ধরে কোনো কাজ নেই আথামনার। ফোনে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমাদের এখানে কোনো খাবার নেই। রুটি নেই, সামান্য আটাটুকুও কিনতে পারছি না। যদি বা আটা পাওয়া যায়, তার দাম অনেক চড়া। আজ স্ত্রী এবং বাচ্চাদের জন্য একটু ডাল কিনতে পেরেছি। কিন্তু কাল ওরা কী খাবে, জানি না।’
আথামনা জানিয়েছেন, সারা দিন ধরে কোথাও না কোথাও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। হয় শেলিং হচ্ছে অথবা বিমান থেকে বোমা ফেলা হচ্ছে। মানুষ এক জায়গায় নিশ্চিন্তে আশ্রয় নিতে পারছেন না। সারাক্ষণ প্রাণের ভয়। তার ওপর খাবার নেই। বহু মানুষ রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছেন। সামাজিকমাধ্যমে এমন বেশ কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। আথামনার কথায়, ‘আমি নিজে দেখেছি কীভাবে মানুষ রাস্তার ওপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছে।’ গত মে মাসে শেষবার আথামনার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল ডিডব্লিউয়ের। সে সময় তিন মাসের ব্লকেড শেষ করে ইসরায়েল গাজায় ত্রাণের ট্রাক ঢুকতে দিয়েছিল। -ডয়েচে ভেলে
গাজার ২০ লাখ মানুষ এর ফলে বেঁচে যাবেন বলে সে সময় মনে হয়েছিল আথামনার। কিন্তু মাসদুয়েক পর সেই অভিমত বদলে গেছে তার। তিনি জানিয়েছেন, ‘পরিস্থিতি সত্যিই শোচনীয়। এক টুকরো রুটির জন্যও লড়াই করতে হচ্ছে। আমি আমার নাতি-নাতনিদের নিয়ে থাকছি। তারা সারাক্ষণ কাঁদছে খিদের জ্বালায়। কীভাবে ওদের মুখে একটু খাবার তুলে দেব, সেই চিন্তাতেই প্রতিটি দিন কাটছে।’ আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য এবং ত্রাণবিষয়ক সংস্থাগুলো নিয়মিত গাজা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করছে। তারা জানিয়েছে, গাজার পরিস্থিতি অত্যন্ত চিন্তার। সেখানে খাবার, ওষুধ পৌঁছাচ্ছে না। জাতিসংঘের সংস্থা ওসিএইচএ জানিয়েছে, গাজার ৮৮ শতাংশ অঞ্চল এখন মিলিটারি জোন বা সেনার জায়গা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর অধিকাংশই কৃষিজমি। সাধারণ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অত্যন্ত কম জায়গার মধ্যে ত্রাণশিবিরে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাতেও শান্তি নেই, ত্রাণশিবির থেকেও তাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। -ডয়েচে ভেলে