শুল্ক নিয়ে সতর্কবার্তার প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধানের পাঠানো চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা এবং নিষেধাজ্ঞা শিথিলে আহ্বান জানানোর দুই সপ্তাহ পর ক্ষমতাসীন জেনারেলদের একাধিক ঘনিষ্ঠ মিত্রের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ওয়াশিংটন।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ সিদ্ধান্তকে ‘চরম উদ্বেগজনক’ অ্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, এর মাধ্যমে চার বছর আগে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যায় অভিযুক্ত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ব্যাপারে মার্কিন নীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে ‘কেটি সার্ভিসেস অ্যান্ড লজিস্টিকস’ এবং এর প্রতিষ্ঠাতা জনাথন মিয়ো কিয়াও থং, ‘এমসিএম গ্রুপ’ ও এর মালিক অং হ্লাইং ও, ‘সানট্যাক টেকনোলজিস’ ও তার মালিক সিত তাইং অং এবং আরেক মিয়ানমারের নাগরিক টিন লাত মিনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা জানায় বলে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের এক বছরপূর্তিতে বাইডেন প্রশাসন ‘কেটি সার্ভিসেস অ্যান্ড লজিস্টিকস’ এবং জনাথন মিয়ো কিয়াও থংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। একই বছর প্রতিরক্ষা খাতে কাজ করা মিন অং হ্লাইং ও এবং সিত তাইং অংয়ের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
অভ্যুত্থানের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে, ২০২৪ সালে টিন লাত মিন এ তালিকায় ঢোকেন। কী কারণে তাদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, তার কারণ ব্যাখ্যা করেনি মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়। হোয়াইট হাউস থেকেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এর আগে ১১ জুলাই ট্রাম্পকে লেখা চিঠিতে মিয়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা মিন অং হ্লাইং যুক্তরাষ্ট্রে মিয়ানমারের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক কমাতে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, প্রয়োজনে তিনি ওয়াশিংটনে একটি আলোচক দল পাঠাতে প্রস্তুত।
মিয়ানমারকে ১ অগাস্ট থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ শুল্ক দিতে হবে ট্রাম্পের এমন সতর্কবার্তার প্রতিক্রিয়ায় হ্লাইং মিয়ানমারের পণ্যে শুল্ক ১০ থেকে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন। এর পাল্টায় মিয়ানমারও আমদানি করা মার্কিন পণ্যে শুল্ক শূন্য থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে রাখবে, বলেন তিনি। তিনি ট্রাম্পকে মিয়ানমারের ওপর দেওয়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল ও প্রত্যাহারের অনুরোধ করে বলেন, এসব নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের জনগণের পারস্পরিক স্বার্থ ও সম্ভাবনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মিয়ানমার ‘বিরল মৃত্তিকা খনিজেরও’ অন্যতম উৎস। চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, বিশেষ করে সামরিক ও প্রযুক্তি খাত এ মৃত্তিকা খনিজের ওপর নির্ভরশীল। ট্রাম্প প্রশাসন এ খনিজে চীনের একাধিপত্য নিয়ে বেশ চিন্তিত। কিন্তু মিয়ানমারের যে এলাকায় এ মৃত্তিকা খনিজের বেশির ভাগ পাওয়া যায়, তা জান্তাবিরোধী গোষ্ঠী কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মির (কেআইএ) নিয়ন্ত্রণে। তাদের তোলা এ খনিজও চীনেই প্রক্রিয়াজাত হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অ্যাডভোকেসি পরিচালক জন সিফটন জান্তাঘনিষ্ঠদের ওপর থেকে ওয়াশিংটন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন।-রয়টার্স
এ সিদ্ধান্ত মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার এবং গণতন্ত্র ফেরাতে যারা লড়াই করছেন, তাদের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠবে, বলেছেন তিনি।