বাজার পরিস্থিতি সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বেলাগাম চালের দামের মধ্যেই তরতর করে বাড়ছে মাছে দাম। ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ক্রেতারা রীতিমতো পরিস্থিতি সামাল দিতে খাবি খাচ্ছেন।
বাজারের চালের দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিলো। এখনও সেই পরিস্থিতি বহাল আছে। সবজির দামও কমেনি। তার সঙ্গে সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাছের ঘাটতি, খামারিদের উৎপাদন খরচ ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়া মূলত এই দাম বাড়ার কারণ। দাম বাড়ার কারণে বাজারে মাছ বিক্রিও কিছুটা কমেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাগামহীনভাবে দাম বাড়তে থাকলে পুষ্টির অন্যতম উৎস মাছ ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। তাই দ্রুত বাজার তদারকি বাড়াতে জোর দিয়েছেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, জোয়ারসাহারা বাজার, বাড্ডা ও রামপুরা বাজারের দেখা গেছে গত এক-দেড় মাসে বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। চাষের মাছের দাম কেজিতে ৪০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে। বড় রুই মাছ (তিন-চার কেজি) ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি রুই (দুই কেজি) ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা ও এক কেজি রুই ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকা। বড় কাতলা প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, মাঝারি কাতলা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা।
সস্তার মাছ তেলাপিয়ার দামও বাড়তি। মাঝারি ও বড় তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা। পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছোট মাছের দামও বেশ বেড়েছে।
চাষের ট্যাংরা প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, কাঁচকি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, মলা ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, চিংড়ি ৭৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। শিং মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা।
রামপুরা কাঁচাবাজারের এক ক্রেতা জানিয়েছেন, ‘বাজারে মাছের কোনো সংকট নেই, এর পরও দামে আগুন। এক মাস আগে যে মাছ ৩২০ টাকা কেজি দরে নিয়েছি, এখন তা ৪০০ টাকা।’
জোয়ারসাহারা বাজারের এক বিক্রেতা বলেন, ‘আড়তে মাছের সংকট নেই, কিন্তু কোরবানির ঈদের পর থেকে অত্যধিক বাড়তি দরে মাছ কিনতে হচ্ছে। মাছের দাম বাড়ায় আমাদের বিক্রিও কিছুটা কমেছে।’
বাড্ডা বাজারের আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘মাছের দাম বেশ কয়েক দিন ধরেই বাড়তি। কিছুদিন আগে অতিরিক্ত গরমে বিভিন্ন এলাকার পুকুরের মাছ মারা যায়। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিরা। এ জন্য তাঁরা মাছের দাম বাড়িয়েছেন।’
রাজধানীর সুপারশপগুলোতেও চড়া দামে মাছ বিক্রি হচ্ছে। দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের চাষের রুই প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা। ইলিশসহ অন্যান্য মাছের দাম আরো চড়া।
ইলিশের এখন ভরা মৌসুম হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ ধরা পড়ছে না। এতে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। অল্প যা কিছু আছে, দাম খুব চড়া। ৫০০ গ্রামের ইলিশ এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা কেজি, ৮০০ গ্রামের ইলিশ এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা, এক কেজির ইলিশ দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা ও দেড় কেজির ইলিশ দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা।
‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৫’ উপলক্ষে গত সোমবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, দেশে ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। তবে দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নেই। এক কেজি সাইজের প্রতি কেজি ইলিশের দাম এখনো দুই হাজার ৫০০ টাকা। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।
বাজারে বেগুন মানভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, ঢেঁড়স ও পটোল ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লম্বা লাউ প্রতি পিস ৭০ থেকে ৮০ টাকা, চালকুমড়া প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
ব্রয়লার মুরগির দাম এখনো ক্রেতার নাগালে রয়েছে। তবে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সোনালি মুরগি। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা এবং সোনালি মুরগি মানভেদে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল