তুরস্কের ইস্তাম্বুলে শান্তি আলোচনার নতুন দফা বৈঠকে রাশিয়া ও ইউক্রেন নিজেদের মধ্যে আরও যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে সম্মত হলেও যুদ্ধবিরতির শর্ত এবং নেতাদের মধ্যে সম্ভাব্য বৈঠক নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব এখনো প্রকট। ‘আমাদের মধ্যে মানবিক বিষয়ে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে কথা আগায়নি’-বুধবার ৪০ মিনিটের বৈঠক শেষে এমনটাই বলেছেন ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের প্রধান রুস্তম উমেরভ।
তিনি জানান, ইউক্রেন আগস্ট শেষ হওয়ার আগেই তাদের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে একটি বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে। ‘এই প্রস্তাবে রাজি হওয়ার মাধ্যমে রাশিয়া স্পষ্টভাবে তার গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাতে পারে’-উমেরভ এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। কিয়েভের প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় রুশ প্রতিনিধিদলের প্রধান ভ্লাদিমির মেদিনস্কি বলেছেন, নেতাদের বৈঠকের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ‘একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা, শূন্য থেকে সব নিয়ে নতুন আলোচনা নয়।’ তিনি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে মৃত সেনাদের সরানোর সুযোগ দিতে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার ছোট ছোট সিরিজ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে ইউক্রেন বলছে, তারা শিগগিরই আরও দীর্ঘ যুদ্ধবিরতি চায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৫০ দিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি না হলে রাশিয়া এবং যারা মস্কোর পণ্য কিনবে তাদের ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। তার কয়েক দিন পর ইউক্রেনে যুদ্ধরত দুই পক্ষ ইস্তাম্বুলে ফের আলোচনায় বসল। যদিও চিরাআন প্রাসাদে হওয়া বুধবারের বৈঠকে ট্রাম্পের আকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি, তবে দুই পক্ষই আরও যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে সম্মত হয়েছে। মেদিনস্কি জানান, দুই পক্ষের আলোচকরা একে অপরের সঙ্গে অন্তত ১ হাজার ২০০ করে যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে রাজি হয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেনের ৩ হাজারেরও বেশি সেনার লাশ হস্তান্তরেরও প্রস্তাব দিয়েছে। মস্কো ৩৩৯ ইউক্রেনীয় শিশুর একটি তালিকা নিয়েও কাজ করছে, এ শিশুদের অপহরণ করা হয়েছে বলে দাবি কিয়েভের। রাশিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, তারা যুদ্ধের মধ্যে মা-বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া শিশুদের সুরক্ষায় তাদের সরিয়ে এনেছিল। ‘কিছু শিশু এরই মধ্যে ইউক্রেনে ফিরে গেছে। বাকিদের নিয়েও কাজ চলছে। যদি তাদের বৈধ অভিভাবক, নিকটাত্মীয় বা প্রতিনিধিদের পাওয়া যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ওই শিশুদেরও ফেরত পাঠানো হবে’-মেদিনস্কি বলেছেন। উমেরভ বলেছেন, যুদ্ধবন্দি নিয়ে আরও অগ্রগতি হবে বলে কিয়েভ প্রত্যাশা করছে। ‘আমরা শিশুসহ বেসামরিক ব্যক্তিদের মুক্তির ব্যাপারে চাপ অব্যাহত রাখব’-বলেছেন তিনি। এই দফার আলোচনার আগেই ক্রেমলিন সবাইকে ‘প্রত্যাশায় লাগাম টানতে’ বলেছিল। দুই পক্ষের অবস্থার একেবারেই বিপরীতমুখী এবং অলৌকিক কিছু হবে কারোরই এমন প্রত্যাশা করা উচিত নয়, বলেছিল তারা। আগের দুই দফায়, ১৬ মে ও ২ জুনের বৈঠকে মোট তিন ঘণ্টার কাছাকাছি আলোচনা হয়েছিল।-রয়টার্স
বুধবার তৃতীয় দফার আলোচনা হলো মাত্র ৪০ মিনিটের। বৈঠক শেষে ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের সদস্য ওলেক্সান্দর বেভজ জানান, কিয়েভ আগস্টে পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠকের প্রস্তাব করেছে, তাহলে ট্রাম্প যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তার মধ্যেই কোনো একটা সমাধানে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়। পুতিন এর আগে জেলেনস্কির ‘মুখোমুখি বৈঠকের’ চ্যালেঞ্জ ফিরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, তিনি জেলেনস্কিকে ইউক্রেনের বৈধ নেতা হিসেবে দেখেন না। কারণ জেলেনস্কি তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও এখনো ক্ষমতায় রয়ে গেছেন, নতুন নির্বাচন দেননি। অন্যদিকে কিয়েভ বলছে, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন মার্শাল ল’র অধীনে রয়েছে, যে কারণে নির্বাচনের দরকার পড়ছে না। -রয়টার্স