হামাসবিরোধী স্লোগান তুলে শত শত ফিলিস্তিনি উত্তর গাজার রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। চলমান সংঘাতের অবসানের পাশাপাশি হামাসকে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার দাবি তুলেছেন তারা। গাজা উপত্যকার উত্তর অংশের বেইত লাহিয়াতে বিক্ষোভগুলো হয়েছে। যেখানে প্রায় দুই মাস যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় তীব্র বোমাবর্ষণ শুরু করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ভিডিও এবং ছবিতে দেখা গেছে শত শত বিক্ষোভকারী, যাদের বেশির ভাগই পুরুষ, হামাসকে দেশ থেকে বহিষ্কারের স্লোগান দেন। কারোর হাতে দেখা যায় ব্যানার যাতে লেখা, ‘যুদ্ধ বন্ধ করুন, আমরা শান্তিতে থাকতে চাই’।
মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে, হামাস যোদ্ধারা বন্দুক এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভকারীদের জোরপূর্বক ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে আক্রমণ করে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, প্রতিবাদে যোগদানের আবেদন সামাজিক মিডিয়া নেটওয়ার্ক টেলিগ্রামে ছড়িয়ে যাওয়ার পরে তারা সংঘবদ্ধ হয়েছিলেন। মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, আমি জানি না কে এই বিক্ষোভের আয়োজন করেছে। প্রতিশোধের ভয়ে বিক্ষোভকারী অনেকেই নিজের নাম বলতে রাজি হননি। প্রতিবাদীদের মধ্যে কেউ কেউ জানিয়েছেন হামাস নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বেসামরিক পোশাকে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে দেখা গেছে। মাজদি নামের একজন প্রতিবাদকারী যিনি তার পুরো নাম প্রকাশ করতে চাননি, তিনি এএফপিকে বলেছেন, ‘মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। যদি গাজায় হামাসের ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়াই সমাধান হয়, তাহলে হামাস কেন জনগণকে রক্ষা করার জন্য ক্ষমতা ছেড়ে দিচ্ছে না?’ গাজা শহরের পশ্চিম অংশে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের একটি পৃথক ফুটেজে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে টায়ার জ্বালিয়ে যুদ্ধ শেষ করার আহ্বান জানাতে দেখা গেছে। তাদের বলতে শোনা গেছে, ‘আমরা দুমুঠো খেতে চাই।’ হামাস ২০০৭ সাল থেকে গাজা শাসন করছে, এক বছর আগে ফিলিস্তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করে এবং তারপর সহিংসভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ক্ষমতাচ্যুত করে। গোষ্ঠীটি এখনো এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে হামাসপন্থি সমর্থকরা প্রতিবাদকারীদের বিশ্বাসঘাতক বলে পাল্টা অভিযোগ করেছে।
জাবালিয়া ছাড়তে ‘চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি’
এবার গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। এলাকাটি দ্রুত খালি না করলে হামলা করা হবে বলেও ‘চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি’ দিয়েছে দখলদার বাহিনী। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানায় আনাদোলু এজেন্সি।
বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র আভিখাই আদরায়ে সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, জাবালিয়া এলাকায় বসবাসকারী গাজার সব নাগরিকের জন্য এটি হামলার আগের চূড়ান্ত সতর্কবার্তা। তিনি ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণের ‘পরিচিত আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে’ চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আভিখাই আদরায়ে এর আগেও উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া ও বেইত হানুনের বাসিন্দাদের জন্য একই ধরনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও গাজা উপত্যকাকে খালি করে ফিলিস্তিনিদের মিসর, জর্ডান ও অন্যান্য দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার একটা পরিকল্পনা তুলে ধরেন। যা মুসলিম, আরব বিশ্বসহ বিশ্বনেতাদের তোপের মুখে পড়ে। এরই মধ্যে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। সোমবার এক এক্স পোস্টে তিনি এ আহ্বান জানান। রয়টার্স জানায়, গাজার যুদ্ধবিরতি পুনরুদ্ধারে একটি নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করেছে মিসর। মিসরের নতুন পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, হামাস প্রতি সপ্তাহে পাঁচজন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে এবং প্রথম সপ্তাহের পর ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ কার্যকর করবে- দুটি নিরাপত্তা সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। এনডিটিভি