বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ মঙ্গলবারের মধ্যেই ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলবর্তী এলাকা কাকিনাড়াতে আছড়ে পড়তে পারে। এই মুহূর্তে দক্ষিণ-পশ্চিম ও পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড় মন্থা। বিশাখাপত্তনম থেকে ৫৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব দিকে এর অবস্থান রয়েছে এবং চেন্নাই থেকে ৫০০ কিলোমিটার পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থান।
মঙ্গলবার সকালে এটি আরও ঘনীভূত হয়ে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বা রাতের দিকে অন্ধ্রপ্রদেশের মছলিপত্তনম থেকে কলিঙ্গপত্তনমের মাঝে এটা আছড়ে পড়বে। এসময় এর গতিবেগ হবে সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে তৎপরতা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই নিম্নচাপ উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে যাওয়ার কারণে ওড়িশা, তেলেঙ্গানা, চেন্নাইয়ের বেশ কিছু জায়গায় হাওয়া এবং সেইসঙ্গে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কবার্তা হিসেবে দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই অন্ধ্রপ্রদেশের ৭টি জেলায় লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাজ্য সরকার আগামী তিন দিন (সোম-বুধবার) স্কুল, কলেজসহ সমস্ত ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময়ে ঝড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কার কারণে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে ঘরের মধ্যেই থাকতে বলা হয়েছে। মাছ ধরা ও সমুদ্রে যাওয়া এবং সৈকত পর্যটনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দক্ষিণ পূর্ব রেল, ইস্ট কোস্টাল রেলের বিভিন্ন শাখায় একাধিক ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।
গোটা অন্ধ্রপ্রদেশজুড়ে কমপক্ষে ৪০০ ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। এর মধ্যে কেবলমাত্র এনটিআর জেলাতেই ১১৮টি খোলা হয়েছে। ধস প্রবণ এলাকা থেকে মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মন্থার সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে সোমবারই অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু এক জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে রাজ্যের সমস্ত শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা যেন সতর্ক থাকেন, প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধির উপরে পর্যবেক্ষণ করেন। জেলা শাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সমস্ত রকমের পদক্ষেপ নিতে।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অন্ধপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে ফোনে কথা বলে পরিস্থিতির খোঁজখবর নিয়েছেন। পাশাপাশি সমস্ত ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে ওয়ার রুমে বসে মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যের মন্ত্রী নারা লোকেশ-উভয়ই গোটা ঘটনাটি তদারকি করছেন। ইতোমধ্যে রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা টিম এবং কেন্দ্রীয় দুর্যোগ মোকাবিলা টিমকে মোতায়েন করা হয়েছে। যে কোনো আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্য, কৃষি, বিদ্যুৎ ও ফায়ার সার্ভিস বিভাগকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
তামিলনাড়ুর উপমুখ্যমন্ত্রী উদয়নিধি স্ট্যালিন জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মন্থার ব্যাপক কোনো প্রভাব রাজ্যে পড়বে না। কারণ এটি অন্ধপ্রদেশের দিকে চলে যাচ্ছে। তবে উত্তর চেন্নাই, তিরুভাল্লুর, রানিপেঠ, কাঞ্চীপুরমসহ রাজ্যটির বেশ কিছু জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। সেইসাথে উপকূলবর্তী এলাকায় সতর্কবার্তা করা হয়েছে। রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিনের নির্দেশে রাজ্যের একাধিক পুকুর, খালগুলোকে সংস্করণ করা হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ওড়িশার গজপতি জেলায় প্রবল বর্ষণ শুরু হয়েছে। জেলাশাসক মধুমিতা জানিয়েছেন, বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড় বৃষ্টি সম্ভাবনার বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ভূমিধস প্রবণ এলাকা থেকে মানুষজনকে সরিয়ে নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়ে গেছে। প্রশাসনের পক্ষে এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সমস্ত রকমের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সোমবার বিকালে কলকাতার আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের আঞ্চলিক অধিকর্তা হাবিবুর রহমান বিশ্বাস জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার থেকে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত হতে পারে। উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং কালিম্পং জলপাইগুড়ি জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে এবং দক্ষিণ বঙ্গের জেলা গুলোতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিচু এলাকায় ধস ও জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে বলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে, সেই সঙ্গে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
কলকাতাতেও মেঘলা আকাশ বৃষ্টির সম্ভাবনা। মঙ্গলবার থেকে শুক্রবারের মধ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বুধবার এবং বৃহস্পতিবার বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কলকাতাতে, সেই সাথে দমকা বাতাস বইবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই