রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেল পিলারের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে আবুল কালাম আজাদ নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। আজাদের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠি গ্রামে। আজাদের পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ও পরিবারকে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও রেল উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। এ ঘটনায় সেতু বিভাগের সচিবকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। যদিও এক মাস আগেও বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল। কিন্তু এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে। এ ঘটনায় নকশাগত ত্রুটিকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহতের গ্রামের বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার স্বজনরা জানান, আবুল কালাম আজাদের মৃত্যুর খবর সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারেন। এ খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে নিহতের বাড়িতে ছুটে আসেন স্বজন ও এলাকাবাসী। আবুল কালাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সি পরিচালনা করতেন। স্বজনরা জানান, স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে আবুল কালাম নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায় বসবাস করতেন। পারিবারিক জীবনে তিনি এক পুত্র ও এক কন্যাসন্তানের জনক। তার ছেলে আবদুল্লাহর বয়স পাঁচ বছর এবং মেয়ে সুরাইয়া আক্তারের বয়স তিন বছর। আবুল কালামের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়েছে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের পরিবেশ। ৩৬ বছর বয়সি কালামের স্ত্রী আইরিন আক্তার পিয়া গতকাল বিকালে মর্গের সামনে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। এক ছেলেকে কোলে নিয়ে তিনি বারবার বলছিলেন, ‘আজ (কালামকে) আমি বিদায় দিতে চাইনি। দরজা লাগাতেও যাইনি। এখন আমার বাচ্চাদের কী হবে?’ নিহতের চাচাতো ভাই আবদুল গণি চোকদার বলেন, ‘আবুল কালাম খুব পরিশ্রমী ও ভদ্র স্বভাবের মানুষ ছিলেন। নিজের চেষ্টায় ঢাকায় ব্যবসা দাঁড় করিয়েছিলেন। সরকারের অবহেলার কারণে আমার ভাই মারা গেল। এখন তার পরিবারে দায়দায়িত্ব কে নেবে? দুর্ঘটনার পরপরই মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। পরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত আংশিক চালু করে কর্তৃপক্ষ। এদিকে মতিঝিল থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল বন্ধ হওয়ায় মতিঝিল, পল্টন, কাকরাইল, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার এলাকায় তীব্র যানজট দেখা যায়। পরিবহনের সংকট থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
এ ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সড়ক ও রেল উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, দুর্ঘটনায় সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। তিনি আরও বলেন, আজাদের পরিবারের সব দায়দায়িত্ব মেট্রোরেল গ্রহণ করবে। প্রাথমিকভাবে তার পরিবারকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পরে তার পরিবারে যদি কর্মক্ষম সদস্য থাকে তাহলে তাকে মেট্রোরেলে চাকরি দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে মেট্রোরেলের নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ফার্মগেটের খেজুরবাগান মোড়ে নির্মাণ নকশায় ত্রুটি ছিল। এর আগেও এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে, জাপানিজ ঠিকাদারদের ঠিক করতে বলা হলেও করেনি।
যদিও এর আগে ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর খামারবাড়ি এলাকায় মেট্রোর একটি পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে। এতে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা বন্ধ থাকে ট্রেন চলাচল। ভায়াডাক্টের বিয়ারিং প্যাড নিয়ে নির্মাণের সময়ই প্রশ্ন উঠেছিল। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে এ ব্যাপারে আপত্তিও জানানো হয়েছিল। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। কিন্তু তখন অদৃশ্য কারণে কেউ তাতে কর্ণপাত করেনি। শেষ পর্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ বিয়ারিং প্যাডই বসানো হয়