চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৫৭ সালে। চমেকের অধীনে ডেন্টাল ইউনিট চালু হয় ১৯৯০ সালে। কিন্তু ৩৬টি বছর পার হলেও এখনো চট্টগ্রামে সরকারিভাবে পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়নি। চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। চমেকের ডেন্টাল ইউনিটে প্রতি বছর ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই ডেন্টাল ইউনিটের শিক্ষার্থীরা পূর্ণাঙ্গ কলেজের জন্য আন্দোলন করে আসছেন। গত ১৩ অক্টোবর শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা ও সেবা বন্ধ করে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিল দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীদের। প্রতিদিন গড়ে ২০০-২৫০ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, জনবল ও অবকাঠামোর নিশ্চয়তা। তবে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক চট্টগ্রামে ডেন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠায় সম্ভাব্য তিনটি স্থান পরিদর্শন করেছেন। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৩৬ বছরের পুরোনো এই ডেন্টাল ইউনিটে সমস্যা-সংকট নিত্যসঙ্গী। কনজারভেটিভ ওয়ার্ডে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের জন্য তিনটা দন্ত চেয়ার থাকলেও একটা নষ্ট। বাকি দুটির কোনোটির লাইট নষ্ট, কোনোটির সাকার নষ্ট। ফলে দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়েই কোনো রকম কাজ করতে হয়। এতে রোগী-চিকিৎসক দুজনেরই কষ্ট হয়। চিকিৎসককে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার ফলে ঘাড় ব্যথা ও ব্যাকপেইন দেখা দেয়। অতিজরুরি অটোক্লেভ মেশিনটা থাকলেও কাজে আসে না। জীবাণুমুক্ত করতে শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করেন স্যালাইন। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। দাঁত ফেলার ওয়ার্ডে ৫-৬টা চেয়ার আছে। এর মধ্যে একটা চেয়ারের লাইট নষ্ট। স্কেলিং ওয়ার্ডে ৩টা চেয়ারের মধ্যে একটা সাকার নষ্ট। অথচ এটি ছাড়া স্কেলিং করা যায় না। প্রস্থোডনটিক্স ওয়ার্ডে নেই কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি। শিক্ষার্থীদের কাছে এটি একটা ‘হোটেলের রান্না ঘরের’ মতো। ৩০০ শিক্ষার্থীর জন্য আছে মাত্র চারটি ক্লাসরুম। এখানেই একসঙ্গে ক্লাস করতে হয়। ক্লাসরুমের লাইট ও ফ্যান নষ্ট। এগুলো মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। নেই কার্যকর এক্স-রে মেশিন ও প্রশিক্ষিত অপারেটর। রোগীদের বাইরে গিয়েই অতিরিক্ত খরচে এক্স-রে করাতে হয়। রুট ক্যানেল চিকিৎসার পর ক্যাপ পরানোর ব্যবস্থাও বন্ধ। প্রস্থোডনটিক্স বিভাগেও নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি ভবন থাকলেও ডেন্টাল বিভাগের জন্য আছে মাত্র দুটি ফ্লোর। বাজেট, যন্ত্রপাতি, অবকাঠামো ও জনবল- কোনোটিই পর্যাপ্ত নয়। এটি ডেন্টাল বিভাগকে উপেক্ষারই নামান্তর। আমরা পদে পদে বৈষম্যের শিকার। তা ছাড়া পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতনের জন্য শিক্ষকরা প্রতি মাসে ব্যক্তিগতভাবে ৩ হাজার টাকা করে দেন। তা ছাড়া, অনেক সময় শিক্ষকরা নিজ উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের জন্য যন্ত্রপাতি কিনে দেন। শিক্ষকদের বহন করতে হয় বিভিন্ন কর্মচারীর বেতনও। চমেকের ডেন্টাল ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান ডা. মনোজ কুমার বড়ুয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবগত। এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেছেন। আশা করি, স্থান চূড়ান্ত হলে পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের অনেক কিছুরই সংকট আছে। ভবন, আধুনিক চিকিৎসা উপকরণ, প্রয়োজনীয় বরাদ্দসহ নানা কিছু। এসব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।