কিছু কিছু মৃত্যু রেখে যায় অসংখ্য প্রশ্ন ও রহস্য। রহস্যজনক এসব মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে শোবিজ জগতের বহু সফল তারকার নাম। এমন মৃত্যুর বহু বছর পরও এর কারণ নিয়ে রয়ে যায় ধোঁয়াশা। কূলকিনারা হয়নি এসব তারকার মৃত্যুরহস্যের। শোবিজ জগতের বেশ কজন জনপ্রিয় তারকার রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে লিখেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ
সালমান শাহ
নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক সালমান শাহ। প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন।। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় ২৭টি ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র ছাড়াও বেশ কিছু দর্শকনন্দিত নাটকে অভিনয় করেন। খ্যাতির চূড়ায় থাকা অবস্থায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ইস্কাটনের নিজ বাসভবনে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায় সালমান শাহর। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তার মৃত্যু নিয়ে রহস্য এখনো কাটেনি। সালমান শাহর মৃত্যুর জন্য স্ত্রী সামিরা দায়ী বলে অভিযোগ করেন তার মা। এমনকি পরবর্তী সময়ে সালমানের পরিবারের পক্ষ থেকে স্ত্রী সামিরা ও আরও কয়েকজনকে আসামি করে অপমৃত্যুর মামলা করা হয়। দুই বছর আগে পিবিআইয়ের তরফ থেকে জানানো হয় সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন। পিবিআইয়ের এ দাবি মানতে নারাজ তার পরিবার ও ভক্তরা। তাই সম্প্রতি সালমানের পরিবার অপমৃত্যুর মামলাটিকে হত্যা মামলা হিসেবে নতুন করে দায়ের করেছে।
সোহেল চৌধুরী
ঢাকাই চলচ্চিত্রের আকাশে সোহেল চৌধুরী ছিলেন দ্রুত নিভে যাওয়া তারা। এক মধ্যরাতে রাজধানীর অভিজাত এলাকার একটি ক্লাবে চলছে ডিজে পার্টি। উচ্চ শব্দের মিউজিকের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছেন প্রায় ২০০ তরুণ-তরুণী। এ সময় গাড়িতে করে এলেন সুদর্শন নায়ক সোহেল চৌধুরী। সঙ্গে কয়েক বন্ধু। ক্লাবের গেটের সামনে গাড়ি থেকে নামতেই তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে অস্ত্রধারীরা। নায়কসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন। ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন সোহেল চৌধুরী। কিন্তু দর্শক আজও জানতে পারেনি প্রিয় এ তারকার খুনের রহস্য।
দিব্যা ভারতী
জনপ্রিয় বলিউড অভিনেত্রী দিব্যা ভারতী ৫ এপ্রিল, ১৯৯৩ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে মারা যান। তিনি মুম্বাইতে তার অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের পঞ্চম তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন এমন সন্দেহ থাকলেও বেশির ভাগ মানুষের ধারণা, তাকে ধাক্কা দিয়ে বারান্দা থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, সম্ভবত তার ঈর্ষান্বিত স্বামী এ কাজ করে থাকতে পারেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে নায়িকা হিসেবে অভিষেক করেই তুমুল খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। তাই তিনি হতাশা থেকে আত্মহত্যা করতে পারেন, এটা অনেকেই বিশ্বাস করেন না। মুম্বাই পুলিশ এ ক্ষেত্রে প্রমাণ সংগ্রহে সফল হয়নি। ১৯৯৮ সালে এ মামলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। যারা পুরো বিষয়টি ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখে তার স্বামী সাজিদ নাদিয়াওয়ালার দিকে আঙুল তুলছিলেন। দিব্যার মৃত্যুকে ঘিরে রহস্য আজও রয়ে গেছে।
শ্রীদেবী
শ্রীদেবী। এই কিংবদন্তি বলিউড অভিনেত্রী ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সালে মাত্র ৫৪ বছর বয়সে মারা যান। তাকে দুবাইতে হোটেল রুমের বাথটাবে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। তার মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক কারণ দুর্ঘটনাজনিত ডুবে যাওয়া বলা হলেও এ মৃত্যুকে ঘিরে অনেক প্রশ্ন এবং রহস্যের উত্থান হয়েছিল। বাস্তবে কেউ কি এত স্বল্প পরিমাণ পানিতে ডুবে মারা যেতে পারে? এটি অনেকে বিশ্বাসই করতে পারেননি। অনেকের ধারণা, এর সঙ্গে তার স্বামী বনি কাপুর জড়িত ছিলেন। কারণ সেদিন হোটেল রুমে তার স্বামী ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। একটি আনন্দ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে তার এমন মৃত্যুকে কেউই স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি আজও।
জিয়া খান
রহস্যময় মৃত্যু ঘটে এ প্রজন্মের অভিনেত্রী জিয়া খানেরও। জুহুর ফ্ল্যাটে আত্মহত্যা করেছিলেন তিনি। সে সময় তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, অথচ অবিবাহিত। জীবনের সবচেয়ে সুখের মুহূর্তে এমন একটি পদক্ষেপ কেন নিয়েছিলেন জিয়া? অভিযোগ উঠেছিল নায়িকার সেই সময়ের প্রেমিক সুরুজ পাঞ্চোলির বিরুদ্ধে। জিয়ার মা দাবি করেছিলেন, পরিস্থিতির চাপে তার মেয়ে বাধ্য হয়েছিল নিজেকে শেষ করতে। উদ্ধার হয়েছিল একটি সুইসাইড নোটও। জিয়ার সেই মৃত্যুর মামলা আজও চলছে।
সুশান্ত রাজপুত
৩৪ বছর বয়সি প্রতিভাবান এই অভিনেতার মৃতদেহ গত বছরের ১৪ জুন মুম্বাইয়ের বান্দ্রাতে অবস্থিত তার ফ্ল্যাট থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ডাক্তারি রিপোর্ট মতে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে অবসাদে ভুগছিলেন সুশান্ত। চিকিৎসাও চলছিল। যদিও তার মৃত্যুকে ঘিরে উঠে হত্যার গুঞ্জন। অভিযোগের আঙুল যায় তার বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীসহ একাধিকজনের দিকে। কিন্তু সেই মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি।
মাইকেল জ্যাকসন
সংগীত জগতের পপ রাজা মাইকেল জ্যাকসন। তার মৃত্যু হয়েছিল তীব্র প্রোপোফল এবং বনজোডিয়াজেপাইন নেশার কারণে বলে পলিশ জানায়। যা তাকে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ড. কনরাড মারে দিয়েছিলেন। তারপরও মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুকে ঘিরে রহস্য রয়ে গেছে। অনেকের দাবি, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে হত্যা করা হয়। আজও তার মৃত্যু রহস্যের কোনো যৌক্তিক সমাধান পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, আগামীতেও এ রহস্য নিয়ে ভক্তদের মাঝে প্রশ্ন থেকেই যাবে।
এলভিস প্রিসলি
এলভিস প্রিসলি। যিনি ছিলেন রক অ্যান্ড রোলের রাজা। ১৯৭৭ সালের ১৬ আগস্ট মাত্র ৪২ বছর বয়সে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক কারণ হিসেবে হার্ট অ্যাটাক বলা হলেও এ আকস্মিক মৃত্যু ঘিরে অনেক রহস্য ছড়িয়েছে। যার সমাধান আজও পাওয়া যায়নি। অনেকে বিশ্বাস করেন, প্রিসলির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি বরং তাকে হত্যা করা হয়েছিল। তার হত্যার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে অনেকে সন্দেহ করেছেন হয়তো বা কোনো মাফিয়া বা তার নিজের ডাক্তারই তাকে হত্যা করেছেন। কিন্তু তার মৃত্যু রহস্যের আজ পর্যন্ত কোনো কূলকিনারা হয়নি।

মেরিলিন মনরো
হলিউডের আইকনিক অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো। এই নায়িকা ৫ আগস্ট, ১৯৬২ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মারা যান। তার মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক কারণ হিসেবে জানা যায়, তিনি বারবিটুরেট ওভারডোজের মাধ্যমে আত্মহত্যা করেন। কিন্তু তার মৃত্যু ঘিরেও অনেক ষড়যন্ত্রের আভাস রয়েছে। অনেকের বিশ্বাস, তাকে হত্যা করা হয়। মনরোর স্বামী রবার্ট স্ল্যাটজারের দাবি ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির সঙ্গে তিনি রোমান্টিকভাবে জড়িত ছিলেন বলে রাষ্ট্রীয় গোপন কোনো কিছু জেনে যাওয়ার ফলে তাকে হত্যা করা হতে পারে। হয়তো এজন্যই মনরোর মৃত্যুর পর তার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও কথিত সুইসাইড নোট সরিয়ে ফেলে সেগুলো হারিয়ে গেছে দাবি করা হয়েছিল।
ব্রুসলি
ব্রুসলি। একাধারে যিনি ছিলেন চীনা মার্শাল আর্ট শিল্পী, শিক্ষক, অভিনেতা এবং জিৎ কুন দো নামক নতুন ধরনের মার্শাল আর্ট ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাতা। তার মৃত্যু হয় হংকংয়ে এবং এই মৃত্যু যথেষ্ট বিতর্কের সূত্রপাত হয়। ১৯৭৩ সালের ২০ জুলাই হঠাৎ করে তার মৃত্যু নিয়ে অনেকের মধ্যে নানা সন্দেহ ও মতবিরোধ ঘটে। তিনি মাত্র ৩২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার আকস্মিক মৃত্যুকে ঘিরে এখনো নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের কথা শোনা যায়। তারপরও আজ পর্যন্ত রহস্যই রয়ে গেছে ব্রুসলির এই মৃত্যু। হয়নি মৃত্যু রহস্যের উদ্ঘাটন।