মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বপ্ন দেখছেন। কল্পনা করছেন। গল্প শোনাচ্ছেন। তিনি এমন এক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বানাতে চান যা গোটা আমেরিকাকে সুরক্ষা বলয়ে নিয়ে আসবে। ইসরায়েলের আয়রন ডোমের চেয়েও হবে কয়েক গুণ শক্তিশালী। স্যাটেলাইট সংযোগে এটা হয়ে উঠবে এক অনন্য প্রতিরক্ষাব্যূহ। তবে ট্রাম্পের সেই স্বপ্নের গোল্ডেন ডোম ঠিক কবে নাগাদ আলোর মুখ দেখবে তার কোনো সঠিক হদিস দেয়া যায়নি। তবে এদিকে নাকি কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছে চীন। ট্রাম্প যা স্বপ্ন দেখছেন, তা ইতোমধ্যে বাস্তবে পরিণত করেছে বেইজিং।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘বিশ্বব্যাপী প্রতিরক্ষা’ ব্যবস্থা তৈরি করেছে চীন। চীনের এই ব্যবস্থা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও এটি পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে চীনের দিকে আসা প্রায় এক হাজার ক্ষেপণাস্ত্র একই সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম বলে জানা গেছে।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, চীন এই ব্যবস্থাটির নাম দিয়েছে ডিস্ট্রিবিউটেড আর্লি ওয়ার্নিং ডিটেকশন বিগ ডেটা প্ল্যাটফর্ম। পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) তৈরি ও পরীক্ষিত এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটিই প্রথম এমন সিস্টেম যা গ্রহব্যাপী কভারেজ বা বিশ্বজোড়া নজরদারি সক্ষমতা অর্জন করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এই ধারণা নতুন নয়। ১৯৮৩ সালে স্নায়ুযুদ্ধের চরম উত্তেজনার সময় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান প্রথম স্ট্র্যাটেজিক ডিফেন্স ইনিশিয়েটিভ বা স্টার ওয়ার্স ঘোষণা করেন। রিগান বলেছিলেন, এমন একটি ব্যবস্থার কথা ভাবুন যা আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আমাদের উপকূলে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস করতে পারে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সেই স্টার ওয়ার্স আর কখনোই পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।
২০২৫ সালের মে মাসে, ট্রাম্প সেই স্বপ্নকেই নতুন করে জাগিয়ে তোলেন। তিনি ১৭৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গোল্ডেন ডোম নামে একটি বহু-স্তরীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির প্রস্তাব দেন। রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, এতে উপগ্রহভিত্তিক একটি স্তরসহ মোট চারটি স্তর থাকবে, যা স্থল, সমুদ্র, আকাশ এবং মহাকাশ জুড়ে একটি এআই-সক্ষম নেটওয়ার্ক তৈরি করবে। কিন্তু সেই প্রকল্পের কোনো সুস্পষ্ট কারিগরি কাঠামো এখনো তৈরি হয়নি।
অন্যদিকে, চীনের ক্ষেত্রে স্বপ্ন এখন বাস্তবতার দিকে। দক্ষিণ চায়না মর্নিং পোস্টের রিপোর্ট অনুসারে, চীনা বিজ্ঞানীরা তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি কার্যকর প্রোটোটাইপ বা পরীক্ষামূলক মডেল মোতায়েন করেছেন।
এই ব্যবস্থাটি মহাকাশ, সমুদ্র, আকাশ এবং স্থলভাগের বিভিন্ন সেন্সর ব্যবহার করে হুমকি সনাক্ত ও বিশ্লেষণ করে। এটি রিয়েল টাইমে ক্ষেপণাস্ত্রের আলোর গতিপথ, অস্ত্রের প্রকারভেদ এবং কোনটি আসল ওয়ারহেড আর কোনটি ডিকয় (নকল লক্ষ্যবস্তু) সেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সঠিক পথে চালিত করে।
নানজিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রনিক্স টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা একটি গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন, প্রোটোটাইপ সিস্টেমটি নোড জুড়ে এক হাজার পর্যন্ত ডেটা প্রক্রিয়াকরণ কাজ ডিস্ট্রিবিউটেড প্যারালাল শিডিউলিংয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পারে। তারা আরও উল্লেখ করেছেন, এই ব্যবস্থাটি বিচ্ছিন্ন এবং বিভিন্ন ফরম্যাটের আর্লি ওয়ার্নিং ডেটা সমন্বিতভাবে সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও বিশ্লেষণ করে পিএলএ সদর দপ্তরের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার সক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলেছে।
সূত্র: এনডিটিভি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল