ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িক কারাগার হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারা-১ শাখা থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব মো. হাফিজ আল আসাদ।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ধারা ৫৪১(১) এবং কারাগার আইন ১৮৯৪-এর ধারা ৩(বি) অনুযায়ী ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোড সংলগ্ন উত্তর পাশে অবস্থিত ‘এমইএস’ বিল্ডিং নং-৫৪-কে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হলো। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে। তবে কোন উদ্দেশ্যে ভবনটি ব্যবহার করা হবে, সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। এদিকে ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণার বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোন জায়গাটাকে জেল ঘোষণা করবেন, প্রিজন অথরিটির (কারা কর্তৃপক্ষের) আওতায় নিয়ে আসবেন এ ব্যাপারে সরকারের ক্ষমতা আছে। এটা সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত। সুতরাং এটা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ বা চিন্তিত হওয়ার বিষয় না।’
তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য হচ্ছে- যখন কোনো আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হবে, যখন এই পরোয়ানাটিকে তামিল (বাস্তবায়ন) অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন পরোয়ানাটা তামিল করবে, কাউকে গ্রেপ্তার করবে তখন সরাসরি জেলে নেওয়ার কোনো বিধান নেই। আইন হচ্ছে, আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে আনতে হবে। আদালত পরবর্তী আদেশ দিয়ে বলবেন, তাকে (গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে) কারাগারে পাঠানো হোক। তখন কারাগার বলতে সেটি কেন্দ্রীয় কারাগারও হতে পারে, সেটা জাতীয় সংসদ ভবনের মধ্যেও হতে পারে, এমপি হোস্টেল হতে পারে বা অন্য কোনো জায়গাকে সরকার যদি কারাগার ঘোষণা করে, সেই জায়গায় পাঠানো যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘কোন জায়গাকে কারাগার করা হচ্ছে, এটা প্রসিকিউশনের বা তদন্ত সংস্থার বিবেচ্য বিষয় নয়। আমাদের বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, আইন অনুযায়ী কাজটা করতে হবে। আসামিকে যদি গ্রেপ্তার করা হয় তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাদের কারাগারে আনতে হবে। এটা সংবিধানে যেমন আছে, আইসিটির আইনে আছে, সিআরপিসিতেও আছে।’ পুলিশ ছাড়া অন্য কেউ গ্রেপ্তার করতে পারবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, অ্যারেস্টিং অথরিটি (গ্রেপ্তারকারী কর্তৃপক্ষ) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানেই হচ্ছে পুলিশ। আর্মির হাতে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা নেই এখানে বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। এই আদেশ (ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা) পালনের ব্যাপারে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের অফিসকে অবহিত করা হয়েছে। তারা কিন্তু গ্রেপ্তার করবেন না।’
এখানে উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জুলাইয়ের গণ অভ্যুত্থানসহ বিগত সরকারের আমলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক ও বর্তমান ২৫ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ২১ অক্টোবরের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করে ২২ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর গত ১১ অক্টোবর ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান জানান, অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৫ জন সেনা হেফাজতে আছেন। তাদের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।