আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ভোটারদের সমর্থনে দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে ছয়টিতে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। অপর দুটি বিভাগের একটিতে জামায়াতে ইসলামী, আরেকটিতে আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) এগিয়ে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের সমর্থনেও এগিয়ে বিএনপি। তবে ছাত্রদের সমর্থন বেশি জামায়াতে ইসলামীর প্রতি। আর নারী ভোটারদের পছন্দের তালিকায় এগিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনোভিশন কনসাল্টিংয়ের ‘জনগণের নির্বাচন ভাবনা’ নিয়ে দ্বিতীয় দফার তৃতীয় পর্বের জরিপে এ ফলাফল উঠে এসেছে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিডিবিএল ভবনে জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। জরিপের ফল তুলে ধরেন ইনোভিশন কনসাল্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাইয়াত সারোয়ার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ভয়েস ফর রিফর্মের সহআহ্বায়ক ফাহিম মাশরুম। গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জরিপটি চালানো হয়। এতে অংশ নেন ১০ হাজার ৪১৩ জন ভোটার।
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৩৭ দশমিক ৯ শতাংশ বিএনপি, ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ জামায়াতকে সমর্থন দিয়েছে। কৃষক, গৃহকর্মী ও শ্রমজীবীদের সমর্থনেও এগিয়ে বিএনপি। কৃষকদের মধ্যে ৩৯ দশমিক ২ শতাংশ বিএনপি ও ২৭ দশমিক ৯ শতাংশ জামায়াতকে সমর্থন দিয়েছে। ছাত্ররা বেশি সমর্থন দিয়েছে জামায়াতকে। তাদের ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ জামায়াতকে, ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ বিএনপি ও ১১ দশমিক ৮ শতাংশ এনসিপির প্রতি সমর্থন দিয়েছে।
জরিপের প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আট বিভাগের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও খুলনায় বিএনপি এগিয়ে আছে। আর রংপুর বিভাগে এগিয়ে জামায়াত। আওয়ামী লীগ এগিয়ে বরিশাল বিভাগে। এর মধ্যে ঢাকায় ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোটার বিএনপিকে, আওয়ামী লীগকে ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ, ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ জামায়াতকে, এনসিপিকে ৩ দশমিক ২ শতাংশ; চট্টগ্রামের ভোটারদের মাঝে ৪১ দশমিক ৯ বিএনপিকে, ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ জামায়াতকে, আওয়ামী লীগকে ১৭ দশমিক ১ শতাংশ, ৭ দশমিক ৭ শতাংশ এনসিপিকে; সিলেটের ভোটারদের ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ বিএনপিকে, ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ জামায়াতকে, আওয়ামী লীগকে ১৪ শতাংশ এবং এনসিপিকে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ ভোটার সমর্থন দিয়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহে বিএনপিকে ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ, জামায়াতকে ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ, আওয়ামী লীগকে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ, এনসিপিকে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে বিএনপিকে ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ, জামায়াতকে ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ, আওয়ামী লীগকে ৯ দশমিক ২ শতাংশ, এনসিপিকে ১ দশমিক ২ শতাংশ; খুলনায় বিএনপিকে ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ, জামায়াতকে ৩০ দশমিক ১ শতাংশ, আওয়ামী লীগকে ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ ও এনসিপিকে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ ভোটার সমর্থন দিয়েছেন। রংপুর বিভাগে ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ ভোটারদের সমর্থন নিয়ে এগিয়ে জামায়াতে ইসলামী।
এ বিভাগে বিএনপিকে ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ, আওয়ামী লীগকে ১২ দশমিক ৫ ও এনসিপিকে ১ দশমিক ২ শতাংশ ভোটার সমর্থন দিয়েছেন। অন্যদিকে বরিশাল বিভাগে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ ভোটারদের সমর্থন নিয়ে এগিয়ে। সেখানে জামায়াতে ইসলামীকে ২৯ দশমিক ১ শতাংশ, বিএনপিকে ২৮ দশমিক ৭ ও এনসিপিকে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ ভোটার সমর্থন দিয়েছেন।
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, তরুণ ভোটারদের (২০১৪ সালের পর প্রথমবার ভোটার) মধ্যে প্রায় ২৮ শতাংশ এনসিপিকে সমর্থন করেন না বা অল্প করেন, কিন্তু ২৪ শতাংশ তীব্রভাবে সমর্থন করেন। তাদের অনেকের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে না পারার সংখ্যা বেশি বলে ফলাফলে উঠে এসেছে।
জরিপে আরও দেখা গেছে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রতি পুরুষের চেয়ে নারীদের সমর্থন কম থাকলেও এনসিপির প্রতি নারীদের সমর্থন বেশি। পুরুষ ভোটারদের ৬১ শতাংশ ও নারীদের ৩৯ শতাংশ বিএনপিকে, জামায়াতের প্রতি ৬৪ শতাংশ পুরুষ ও ৩৬ শতাংশ নারীর এবং এনসিপিকে ৫৩ শতাংশ নারী ও ৪৭ শতাংশ পুরুষ ভোটার সমর্থন দিয়েছেন। এ ছাড়া সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি নিয়ে ৬৮ দশমিক ২ শতাংশ নারী ও ৪৫ দশমিক ৯ শতাংশ পুরুষ ভোটার কিছুই জানেন না বলে উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে গ্রামের ৫৯ শতাংশ ও শহরের ৪৯ শতাংশ ভোটার উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি নিয়ে জানেন না বলেও ফলাফলে দেখা গেছে।
জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে জামায়াতে ইসলামীর যুক্তরাষ্ট্র শাখার মুখপাত্র ড. নকিবুর রহমান বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী নারীদের ভোট কম পায় এমনটাই সবার ধারণা। কিন্তু বাস্তবে সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, রাজশাহীর মতো জেলায় দলটির প্রতি পুরুষ ভোটাদের চেয়ে নারীদের সমর্থন বেশি। বিএনপিও নারীদের ভোটে শক্ত অবস্থানে আছে, যদিও তা জরিপে পুরোপুরি প্রতিফলিত নয়।’ অনুষ্ঠানে এনসিপির পলিসি ও রিসার্চ উইংয়ের লিড খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘নারী ও তরুণরা এখনো এনসিপির ওপর ভরসা রাখছে। সংখ্যালঘু ও সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক সংস্কার ও জবাবদিহি চায়, যা ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য ইতিবাচক সংকেত।’