নানান দাবিদাওয়া আর আন্দোলনে ফের অস্থির হয়ে উঠতে শুরু করেছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। সারা দেশের বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও সরকারি কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছেন আন্দোলনে। এতে শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়াসহ তিন দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর রবিবার রাজধানীতে পুলিশের হামলা ও আটকের প্রতিবাদে সারা দেশে কর্মবিরতি পালন করছেন এমপিভুক্ত শিক্ষকরা। গতকালও তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষকরা জানান, গতকাল থেকেই ক্লাস নেননি শিক্ষকরা। অনেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজির হলেও ক্লাসসহ অন্যান্য কার্যক্রম থেকে বিরত থাকেন। গতকাল তারা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি পালন করবেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। দাবি আদায়ের প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন তারা।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রবিবার শিক্ষকদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা ন্যক্কারজনক ঘটনা। এই সরকারের কাছ থেকে এটি আশা করিনি। আমাদের পাঁচ সহযোদ্ধাকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হবে, ততক্ষণ আমাদের কর্মসূচি চলবে।’
এদিকে ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজ একীভূত করে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে অধ্যাদেশ জারির দাবিতে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর শিক্ষা ভবনসংলগ্ন রাস্তায় অবস্থান নিয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি ঘিরে সচিবালয় অভিমুখে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এ ছাড়া গুলিস্তান থেকে হাই কোর্টগামী গাড়ি চলাচলও বন্ধ থাকে। বিকাল ৪টার দিকে ২৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে প্রবেশ করে শিক্ষা উপদেষ্টা সিআর আবরার ও শিক্ষা সচিবের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে যান। বৈঠক শেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী প্রতিনিধি মো. নাইম হাওলাদার গণমাধ্যমকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি করতে বেশ কিছু প্রশাসনিক ধাপ বাকি আছে বলে জানিয়েছেন আমাদের। অধ্যাদেশের খসড়ায় তারা ৬ হাজারের বেশি মতামত পেয়েছেন, সেগুলো সংকলন করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তারা অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ সভার আয়োজন করবেন। তাই আমরা আরও কিছুদিন সময় দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করছি।
এদিকে গতকাল ঢাকা কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে ধস্তাধস্তি ও হামলার ঘটনায় সারা দেশের সরকারি কলেজে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার কলেজের শিক্ষক কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের ওপর দুষ্কৃতকারীরা হামলা ও টিচার্স লাউঞ্জ ভাঙচুর করেছে। দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার (আজ) সারা দেশের সরকারি কলেজ, সরকারি মাদরাসা ও অন্য অফিসে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও কালোব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন চলবে। বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল বলেন, আহ্বায়ক কমিটি পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করবে। এদিকে গত রবিবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) ভেঙে দুটি পৃথক অধিদপ্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে একটি হবে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং অন্যটি হবে কলেজ শিক্ষা অধিদপ্তর।
মধ্যরাতে ঢাবি-ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ : ফুটপাতে দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয় পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। এতে একজন সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার রাত ১টার দিকে নিউমার্কেট-আজিমপুর কবরস্থানসংলগ্ন শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাসের সামনে রাস্তা ও ফুটপাতের পাশে দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত।
উভয় পক্ষের ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রায় এক ঘণ্টা পর পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলেও উত্তেজনা চলে ভোর ৪টা পর্যন্ত। এ সময় ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) সাদিক কায়েমসহ ছাত্রনেতারা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তারা বিবদমান দুই পক্ষকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।